রণজিৎ ঘোষ, শিবমন্দির : স্কুলের রাশ দলের হাতে রাখতে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগে সরগরম মাটিগাড়ার শিবমন্দিরের শ্রীনরসিংহ বিদ্যাপীঠ। যেহেতু স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না করা পর্যন্ত স্কুলের সমস্ত দায়িত্বে থাকবেন সহকারী প্রধান শিক্ষক, তাই কলকাঠি নাড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। শিক্ষক, শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি সঠিক নিয়মে প্রকাশ করা হয়নি। যে কারণে তাঁরা নিয়োগের ব্যাপারে অন্ধকারে ছিলেন। যখন বিষয়টি জেনেছেন, তখন আবেদনের সময়সীমা শেষ। নির্দিষ্ট একজনকে ওই চেয়ারে বসানোর জন্য গেমপ্ল্যান করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। তবে স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি মৃণাল গোস্বামীর দাবি, ‘শিক্ষা দপ্তরের নিয়ম মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। নিয়োগও স্বচ্ছতার সঙ্গেই হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে অনেকে কেন বিষয়টি জানেন না বলছেন, বুঝতে পারছি না।’ স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে দলের হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের মাটিগাড়া ব্লক (১) সভাপতি অভিজিৎ পাল বলছেন, ‘ওই স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের খবরই আমার জানা নেই।’
শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী শ্রীনরসিংহ বিদ্যাপীঠে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ১৮ অগাস্ট স্কুলের পরিচালন কমিটির বৈঠক হয়। এই বৈঠকেই নিয়োগ সংক্রান্ত আবেদনপত্র নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ অগাস্ট জারি হওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগ্রহীদের ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন জমা দিতে হবে। ২৪ সেপ্টেম্বর ইন্টারভিউ হবে। তৃণমূলের একাংশ এবং স্কুলের শিক্ষকদের অনেকের দাবি, পরিচালন কমিটির যে বৈঠকে নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির সিদ্ধান্ত হয়, সেখানে অসুস্থতার কারণে কমিটির সভাপতিই উপস্থিত ছিলেন না। পরে বাড়িতে গিয়ে রেজোলিউশন কপিতে তাঁর সই নেওয়া হয়েছে। যদিও পরিচালন কমিটির সভাপতি মৃণাল বলেছেন, ‘আমি অসুস্থ ঠিকই, কিন্তু ওই বৈঠকে ছিলাম।’ অভিযোগ, বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা হয়। যাতে একজন আবেদন করতে পারেন। এরপরেও কয়েকজন জেনেছিলেন। তবে আবেদন করতে নিষেধ করা হয় তাঁদের। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের তরফে নিষেধাজ্ঞা আসায় কেউ আর সাহস দেখাননি। এক শিক্ষকের কথায়, ‘প্রত্যেকেই বদলির ভয় পান। এখানে শিক্ষা দপ্তরের প্রভাবশালী একাধিক নেতা রয়েছেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করার জেরে যদি দক্ষিণবঙ্গের কোনও স্কুলে বদলি করে দেওয়া হয়, তার চেয়ে সাধারণ শিক্ষক হিসাবে চাকরি করে সংসার চালাচ্ছি, এটা নিয়েই থাকি।’
২০২০ সাল থেকে শ্রীনরসিংহ বিদ্যাপীঠে প্রধান শিক্ষক নেই। টিচার ইনচার্জরা (টিআইসি) স্কুল পরিচালনা করছেন। স্কুলেরই শিক্ষক গোবিন্দ রায়, রথীন খাসনবিশ এবং মধুসূদন অধিকারী, পর্যায়ক্রমে টিআইসি পদ সামলেছেন গত পাঁচ বছরে। রথীন তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য স্তরের প্রভাবশালী নেতা। পাপিয়া ঘোষ জেলা সভাপতি থাকাকালীন তিনি দলের দার্জিলিং জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের জন্য তিনি আবেদন করেছেন বলে খবর। যদিও তাঁর বক্তব্য, ‘আবেদন করেছি কি না, সেটা এভাবে প্রকাশ্যে বলা সম্ভব নয়। স্কুলের পরিচালন কমিটি জানবে।’