সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হতেই শিলিগুড়ি (Siliguri) থেকে সিকিমগামী (Sikkim) গাড়িভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেল। পাহাড়ি রাজ্যে সড়ক যোগাযোগের লাইফলাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক মেরামতি শুরু হয়েছে। সেজন্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে প্রশাসন। ঘুরপথে সময় লাগছে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। গাড়িচালকদের দাবি, দূরত্বও দ্বিগুণের কাছাকাছি। বাড়তি অর্থ ও সময় ব্যয়ে নাজেহাল যাত্রীরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়িক সহ বিভিন্ন কাজে রোজ যাতায়াতকারী থেকে পর্যটকরা।
ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের তরফে ১০ মে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ি যাতায়াত সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়। বলা হয়, ১২ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হবে যান চলাচল। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ১৭ ও ১৯ তারিখ একইভাবে বন্ধ থাকবে রাস্তা।
ঘুরপথে গাড়ি চালানোর খরচ বেশি, সেই অজুহাতে একধাক্কায় ভাড়া দ্বিগুণ চাওয়ার অভিযোগ উঠছে। সাধারণত শিলিগুড়ি থেকে সিকিমের গ্যাংটক অবধি যেতে শেয়ার গাড়িতে মাথাপিছু ৪০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। এদিন সেই অঙ্ক বেড়ে দঁাড়ায় ৮০০ টাকায়। ছোট গাড়িতে শুধু নামিয়ে দিয়ে এলে সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হত। এদিন চাওয়া হয়েছে গড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা।
গাড়িচালকরা অবশ্য নিজেদের দাবির সমর্থনে যুক্তি সাজাচ্ছেন। শিলিগুড়ি জংশনে দেখা হল সোনু প্রধানের সঙ্গে। গ্যাংটকের শেয়ার গাড়ির চালক তিনি। সোনুর ব্যাখ্যায়, ‘সেবক থেকে গরুবাথান, লাভা, লোলেগাঁও, আলগারা হয়ে সিকিম যেতে হচ্ছে। অনেকটা ঘুরে যাওয়ার জন্য ভাড়া বেশি চাওয়া হয়। সময় অনেক বেশি লাগে। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকছে না। কয়েকদিন ভাড়ার অঙ্ক এমনই থাকবে।’
পহলগামের ঘটনার প্রভাব পড়েছিল উত্তরেও। পর্যটক আসা কমতে শুরু করে। তবে সেই প্রভাব ছিল সাময়িক। ফের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে পর্যটনস্থলগুলোতে। তঁারা ছাড়াও রোজ বহু মানুষ শিলিগুড়ি ও সিকিমের মধ্যে যাতায়াত করেন। বিগত কয়েক বছরে ধসের জেরে একাধিকবার ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়েছিল। সে সময় ডুয়ার্স হয়ে সিকিমে যাতায়াতের কারণে গাড়িভাড়া একইভাবে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল।
এদিন গ্যাংটক যাওয়ার জন্য জংশনে অপেক্ষা করছিলেন সিকিমের বাসিন্দা সন্দীপ গুরুং। বিকেলের দিকে পর্যটকদের সংখ্যা কম থাকে। যেহেতু ঘুরপথে, তাই আসন পুরো ভর্তি না হওয়া অবধি গাড়ি ছাড়তে নারাজ চালকরা। সন্দীপের কথায়, ‘এদিনই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ওষুধ পৌঁছে দিতে হবে গ্যাংটকে। রাস্তা বন্ধ, সেটা আগে জানা ছিল না। ওঁরা পুরো ভর্তি না হলে যাবেন না। দশ হাজার টাকা দিয়ে পুরো গাড়ি ভাড়া করে যাওয়ার সামর্থ্য নেই।’
কেন সব আসন ভর্তি হওয়া চাই? বিকাশ শর্মা নামে এক চালকের যুক্তি, ‘গাড়িভর্তি যাত্রী না পেলে জ্বালানি তেলের টাকা উঠবে না। ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে গেলে তাও পথে যাত্রী পাওয়া যায়। ঘুরপথে সেই সম্ভাবনা কম। তাই স্ট্যান্ডে দঁাড়িয়ে থাকা ভালো।’ বিকাশের সংযোজন, ‘দু’দিন আগে গ্যাংটক থেকে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে ফিরছিলাম। রাস্তায় তিন জায়গায় কাজ চলছে। সেদিন ১০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছিল।’ ক’দিন এমন সমস্যা থাকবে, দাবি তাঁর।