পারমিতা রায়, শিলিগুড়ি: শরতের আকাশ থেকে পেঁজা তুলোর উধাও হওয়ার আগেই উপস্থিতি ঘটে ওঁদের। উৎসব শেষে মলিন মুখ যখন থাকে সকলের, তখন ওঁদের মুখে দেখা যায় হালকা হাসির রেখা। যা সময়ের সঙ্গে চওড়া হয়। এতদিন এটাই ছিল চিরন্তন। কিন্তু সেই হাসি এবার অসময়ে হারিয়ে গিয়েছে শীতের সঙ্গেই।
শিলিগুড়ির (Siliguri) শীতের বাজার বলতেই ভুটিয়া মার্কেট (Bhutia market)। শুধু শিলিগুড়ি কেন, একটা সময় তো জলপাইগুড়ি, ইসলামপুরের বাসিন্দারাও এখানে ছুটে আসতেন গরম পোশাকের টানে। পাহাড়ি ভুটিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে বোনা সোয়েটার, টুপি, মাফলার কিনতে ভিড় জমাতেন প্রচুর মানুষ। সময়ের সঙ্গে তাঁদের সংখ্যা কমলেও, তাঁরা যে গরম পোশাক নিয়ে এখানে আর আসেন না, তা কিন্তু নয়। স্থানীয়দের সঙ্গে তাঁরা মিলেমিশে একাকার। তবে এবছর যেমন সেই ভিড় জমাট বাঁধেনি, তেমনই তেমনভাবে লাভের মুখ দেখতে পারেননি গরম পোশাকের ব্যবসায়ীরা। প্রকৃতি যেন নিজের খেয়ালে সব তছনছ করে দিয়েছে।
কেন জাঁকিয়ে শীত পড়ল না, কেন শীতের আগাম বিদায় ঘটল বা জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব কতটা- এসব ওঁরা বোঝেন না, বুঝতেও চান না। শীতের শেষে হাসিমুখে বাড়ি ফিরতে চান ওঁরা। তাই গোটা মরশুমে কেমন ব্যবসা হল, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাঁদের মুখে শুধুই হতাশা। এখানকার গরম পোশাক বিক্রেতা সুমিত সরকার বললেন, ‘ভারী জিনিসগুলি তো বিক্রিই হয়নি তেমন। হালকা পাতলা সোয়েটারগুলিই বেশি বিক্রি হয়েছে। আসলে শীতটা তেমন জাঁকিয়ে পড়েনি।’ নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতা ভাগ করে ব্যবসায়ী রাজনি গুরুং বলছিলেন, ‘আগে এমন একটা সময় ছিল যখন আমরা মুখিয়ে থাকতাম ভুটিয়া মার্কেটে ব্যবসার জন্য। এখানে এসেও সোয়েটার, মাফলার বোনার কাজ চলত। এবার তো দেখছি যা নিয়ে এসেছিলাম সেগুলিই সব বিক্রি হয়নি।’ বাজার শুরুর মুখে কিছুটা ব্যবসা হলেও পরবর্তীতে তেমন কিছুই হয়নি বলে জানাচ্ছেন অনেকেই। সানি নামের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘এভাবে চলতে থাকলে আর কতদিন ভুটিয়া মার্কেট টিকে থাকবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।’
একটি মাফলারের খোঁজে এখানে এসেছিলেন নন্দিতা দত্ত। তিনি বললেন, ‘আগে তো প্রতিবছর এই বাজার থেকে কিছু না কিছু কিনতাম। এবছর ঠান্ডাই পড়েনি যে কিছু কিনতে আসব। তবে একটা স্কার্ফ কেনার ছিল, তাই আসা।’ কতটা ক্ষতি-লাভ হল এই বছর? ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, গত বছরের তুলনায় ব্যবসা হয়েছে পঞ্চাশ শতাংশ। কারও আবার বক্তব্য, কর্মী খরচ, ভাড়া ওঠানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে কি না বলা মুশকিল। সরিতা ছেত্রী বলছিলেন, ‘নিজেদের খরচ উঠেছে এই অনেক। আগের থেকে প্রায় ষাট শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছে আমার।’ ব্যবসায়ী অতুল প্রসাদের বক্তব্য, ‘এতগুলো মাস এখানে ছিলাম, সব মিলিয়ে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা লাভ তুলতে পেরেছি কি না সন্দেহ।’ রাজা সাহা বললেন, ‘এবছরটা খুবই বাজে গেল। যদি পাঁচ বছরের কথা বলি প্রতিবছর প্রায় ১০ শতাংশ করে ব্যবসা কমছে।’
একটা সময় শীতকাল মানেই ছিল ভুটিয়া মার্কেটে শীতবস্ত্র। তবে শীতের বিদায়ের পাশাপাশি অনলাইন শপিংয়ে মন্দা বাড়ছে বলেও বলছেন ব্যবসায়ীরা।