শিলিগুড়ি: বিরোধীদের উপস্থিতিতে শাসকপক্ষের ধ্বনিভোটে শিলিগুড়ি পুরনিগমের ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট পাশ হয়ে গেল। বিরোধীরা দীর্ঘ সময় বাজেট বিরোধিতায় নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরলেও বাজেট নিয়ে সেভাবে জোরালো প্রতিরোধ করতে পারেনি। অন্যান্যবারের মতো এবার কোনও বিরোধী দল ওয়াকআউটও করেনি। তবে, এই বাজেট দিশাহীন এবং ভিত্তিহীন বলে বিজেপি এবং সিপিএম উভয়পক্ষই দাবি করেছে।
ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার বক্তব্য দিতে উঠে বলেছেন, ‘বাজেট নিয়ে বিরোধীদের থেকে আরও গঠনমূলক ও শক্তিশালী প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আশা করেছিলাম। কিন্তু তাঁরা বাজেট নিয়ে সেভাবে গর্জাতে পারেননি।’ মেয়র বক্তব্যে এক জায়গায় বলেছেন, ‘অভাবের সংসারে যতটা দিতে পারছি, দিচ্ছি।’ যানজট সমস্যা প্রসঙ্গে মেয়রের বক্তব্য ছিল, ‘আগে শিলিগুড়ি রিকশা নগরী ছিল, এখন টোটো নগরী।’ তবে, শহরের উন্নয়নে রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে সবার সহযোগিতায় কাজ করতে চান বলে মেয়র গৌতম দেব দাবি করেছেন। তবে, এদিনের বোর্ডসভায় শাসক-বিরোধী মিলিয়ে পাঁচ কাউন্সিলার অনুপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ পুরনিগমে মেয়র গৌতম দেব ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট এবং ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের সংশোধিত বাজেট পেশ করেছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই বাজেটের ওপরে আলোচনা হয়। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া আলোচনা সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলনেতা বিজেপির অমিত জৈন বলেন, ‘এই কাল্পনিক বাজেট বিগত তিনটি বাজেটের কপি পেস্ট। পরপর তিনটি বাজেটই কার্যত অকৃতকার্য হয়েছে। কোনও পড়ুয়া একটি শ্রেণিতে পরপর তিনবার অকৃতকার্য হলে তাঁকে সেই স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে মেয়র সাহেব চেয়ার ছাড়তে রাজি নন।’ এই বক্তব্যে শাসক দলের কাউন্সিলাররা প্রতিবাদে সোচ্চার হন। এর পরে তিনি বলেন, ‘এই বাজেটকে আমরা সমর্থন করতে পারছি না। মেয়র এই ধরনের বাজেট বই তৈরি করায় পরিকল্পনার কোনও ছাপ রাখতে পারেননি। শিলিগুড়ি শহরের বাজেট, শহর নিয়েই হওয়া উচিত ছিল।’ শহরে বেআইনি নির্মান সহ বিভিন্ন অবৈধ কাজকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাবও দেন তিনি।
সিপিএমের মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘পুরনিগমের বাজেটে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে। ২০২২ সাল থেকে পুরনিগমের যে বাজেট পেশ করা হচ্ছে, বাস্তবে তাঁর অর্ধেকেও পৌছানো যাচ্ছে না। ক্ষমতায় এলে ছ’মাসের মধ্যে শহরের যানজট সমস্যা মেটাবেন বলেছিলেন। কিন্তু প্রতিদিনই যানজট সমস্যা বাড়ছে। কাজেই এই বাজেট পুরোপুরি দিবাস্বপ্ন দেখার মতো। আমরা এই বাজেটকে সমর্থন করতে পারছি না।’
ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার বক্তব্য রাখতে গিয়ে শহরে রেলের জমি রাজ্যকে দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘প্রচুর মানুষ রেলের জমিতে বসবাস করছেন। সেই জমিগুলি রেল রাজ্যকে লিজ দিলে সরকার সেই জমির পাট্টা দিয়ে সেখানে বাড়ি তৈরি করে দিতে পারে। কিন্তু এই নিয়ে বিজেপির সাংসদ, বিধায়করা দিল্লিকে কিছু বলছেন না। আমাদের এখানকার বিধায়ক তো কলকাতা বেশি থাকেন, বিধানসভার বিরোধী দলনেতার নিরাপত্তারক্ষীর মতো ঘুরে বেড়ান।’ এই বক্তব্যের বিরোধিতায় সরব হন বিরোধী দলনেতা অমিত জৈন। ডেপুটি মেয়রকে এই বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানান। পরে ডেপুটি মেয়র বক্তব্য করে সংশোধন করে বলেন, ‘বিরোধী দলনেতার সঙ্গে বন্ধু হিসাবে ঘোরেন।’