সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি : প্রশ্ন উঠতেই পারে, সত্যিই কি শিলিগুড়িতে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে? শহরে বাইক, স্কুটি, চারচাকার গাড়ির চালকদের লাইসেন্স রয়েছে কি না তা যাচাই করতে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা আলাদা করেই চোখে পড়ে। কিন্তু শহরে দাপিয়ে বেড়ানো ই-অটো বা ই-রিকশা চালকদের যে লাইসেন্স প্রয়োজন তা পুলিশের কার্যত জানাই নেই। পরিবহণ দপ্তরের তরফে সেই লাইসেন্স ইস্যু করার বিষয়ে কোনও উদ্যোগ বা তৎপরতা নেই।
শহরের রাস্তায় যাঁরা ই-অটো কিংবা ই-রিকশা চালাচ্ছেন তাঁদের অনেকের নিয়ম ভাঙার ঘটনা হামেশাই চোখে পড়ে। শহরের রাস্তায় ই-রিকশা কিংবা ই-অটো সবই টোটো নামেই পরিচিত। কিন্তু সেই টোটো চালানোর ক্ষেত্রে যে ন্যূনতম প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তা সিংহভাগের নেই। রাস্তায় যাত্রীদের জীবনের দায়িত্ব নিয়ে যাঁদের চলতে হয়, তাঁদের সকলকে লাইসেন্সের আওতায় কেন আনা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন প্রশাসনের কর্তাদের দিকে স্বাভাবিকভাবেই ওঠে। যানবাহন চালাতে গেলে যে লাইসেন্স প্রয়োজন তা পরিবহণ দপ্তর বলছে। কিন্তু কতজন ই-অটো কিংবা ই-রিকশা চালকের লাইসেন্স রয়েছে সেই তথ্য ওই দপ্তরের কাছে নেই। বিষয়টি নিয়ে দার্জিলিং জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক মিল্টন দাস বলেন, ‘ই-রিকাশ বা ই-অটো চালাতে গেলে লাইসেন্স প্রয়োজন। আমাদের কাছে লাইসেন্স-এর আবেদন করতে হয়। এখনও পর্যন্ত লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে কি না সেই তথ্য দেখে বলতে হবে।’
টোটো চালতে গেলে যে লাইসেন্স প্রয়োজন তা পুলিশেরও কার্যত জানা নেই। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ট্রাফিক) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, ‘লাইসেন্সের বিষয়টি নিয়ে আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলব। কতজনের লাইসেন্স রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। যেসব ই-অটো কিংবা ই-রিকশা নথিভুক্ত রয়েছে সেগুলি কীসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা নিয়ে পরিবহণ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।’
নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি যে টোটোগুলি শহরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেগুলির গতি বেশি। বিশেষ করে চারচাকার গাড়ি প্রস্তুতকারী কয়েকটি সংস্থা যেসব ই-অটো বাজারে এনেছে সেগুলি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে চলতে পারে। বিভিন্ন জায়গাতে হামেশাই টোটো দুর্ঘটনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনার দায় যে প্রশাসন এড়িয়ে যেতে পারে না, সেই দাবি শহরবাসীর অনেকেই করছেন।
শিলিগুড়ির চম্পাসারির বাসিন্দা রেশমি সরকার হামেশাই টোটোতে চেপে কলেজে যান। তাঁর কথায়, ‘টোটোচালকের যে সিংহভাগের লাইসেন্স নেই, সেটা জানা ছিল না। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টোটোচালকদের লাইসেন্সের আওতায় আনা হোক।’ মহাকালপল্লির বাসিন্দা সম্রাট দাস, শুভঙ্কর সাহাদের কথায়, অনেক নাবালক রয়েছে যারা টোটো চালাচ্ছে। শহরের বাইরের থেকে টোটো নিয়ে ঢুকে পড়ছে। আদৌ তারা টোটো চালাতে সক্ষম কি না সেটা দেখার কেউ নেই। রাস্তায় নিরাপত্তার জন্য লাইসেন্স জরুরি।