Siliguri | রোজের রুটিনে ছেদ, ভালো নেই মন

Siliguri | রোজের রুটিনে ছেদ, ভালো নেই মন

ভিডিও/VIDEO
Spread the love


প্রিয়দর্শিনী বিশ্বাস, শিলিগুড়ি: সকাল সকাল বাজার করে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পর মেয়েকে স্কুলবাসে তুলে দিতে হত। তারপর খাওয়াদাওয়া সেরে তৈরি হয়ে স্কুলে যাওয়া। এটাই ছিল রোজকার রুটিন। বাড়ি অন্য জেলায়। শিলিগুড়ির (Siliguri) শিবরামপল্লিতে বাড়িভাড়া করে থাকেন। শরীর খারাপ না হলে কিংবা বাড়িতে না গেলে স্কুল সেভাবে বাদ দিতেন না কখনও। ভীষণ ভালোবাসতেন বাচ্চাগুলোকে।

৭-৮ বছরের রুটিনে ছেদ পড়ল। শুক্রবার সকালে আর বাজারে যাওয়া হয়নি। সকালে রান্নাবান্না হয়নি বাড়িতে। মেয়েকে স্কুলেও পাঠাননি। মন ভালো নেই কারও। ভেঙে পড়েছেন মানসিকভাবে। পরিবার তাঁকে সামলাতে ব্যস্ত। স্কুলেও একটি পরিবার তৈরি হয়েছে। এই মন খারাপের দিনে তঁাকে আর একলা ফেলে রাখতে চাইলেন না সেই পরিবারের সদস্যরা।

১২টা নাগাদ ফোন করে বেশ কয়েকজন মিলে জোরাজুরি শুরু করলেন। আসতেই হবে একবার বিদ্যালয়ে। প্রথমটায় আপত্তি জানালেও শেষপর্যন্ত গেলেন। ধীরস্থির। গম্ভীর মুখ। গিয়ে বসলেন শিক্ষকদের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষে। শান্তশিষ্ট মানুষটার ভেতরে তখন ঝড় চলছে। সংসার চলবে কীভাবে, ইএমআই কড়া নাড়ে মাসের শুরুতে, আশপাশের লোকই বা কী বলবেন- হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়। কঁাধে হাত দিয়ে তঁাকে সামলানোর চেষ্টা করলেন অন্য শিক্ষকরা।

ওই ব্যক্তি স্কুলে গেলেও দিনভর বাড়িতে কাটালেন আরেক চাকরিহারা। সেবক রোড সংলগ্ন এলাকায় তঁার ফ্ল্যাট। ঘরের এককোনায় নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে রেখেছিলেন সকাল থেকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিজীবনে ছেদ পড়লেও সম্পর্কে তো ছেদ পড়েনি। তাই তিনি স্কুলে না গেলেও তঁার খোঁজ নিতে অন্য শিক্ষকদের একাংশ এলেন ফ্ল্যাটে।

মুর্শিদাবাদে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে চাইছেন তিনি। বড্ড অশান্ত দেখাচ্ছিল। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন অন্য শিক্ষকরা। ভারী গলায় ওই চাকরিহারা বললেন, ‘পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলাম। ২০১৮ সাল থেকে নিজের মতো করে জীবনটাকে ধীরে ধীরে গোছাতে শুরু করি। চাকরিটা চলে গেল, এখন করব কী?’ কিছুটা থেমে ফের বলতে আরম্ভ করলেন, ‘আজকের দিনটা বড় অদ্ভুত। স্কুলে যাওয়ার তাড়া নেই, কী পড়াব- তার চিন্তা নেই। অথচ অন্য চিন্তাগুলো খুবলে খাচ্ছে। একাধিক লোন রয়েছে। সেগুলো শোধ কীভাবে করব, জানি না। ক’দিন পর থেকে লোকে নানা কথা বলবে আমাকে নিয়ে। আমি তো যোগ্য। তারপরেও চাকরি হারালাম।’

সময় তাঁদের আচমকা এমন পরিস্থিতিতে এনে দঁাড় করিয়ে দেবে, সেজন্য হয়তো প্রস্তুত ছিলেন না কেউ। সামাজিক, আর্থিক চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। কথা বলতে গিয়ে গলা জড়িয়ে আসছিল ফোনের ওপ্রান্তে থাকা এক কর্মচ্যুত। শুধু টের পাওয়া গেল, হালকা হাসলেন তিনি। হয়তো কান্নাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *