দিলীপ সরকার
(প্রাক্তন রেজিস্ট্রার, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়)
একথা অনস্বীকার্য যে দ্রুত বেগে বেড়ে চলা আমাদের শহর শিলিগুড়ি (Siliguri), পশ্চিমবাংলার অঘোষিত দ্বিতীয় রাজধানী। বিকেন্দ্রীকৃত প্রশাসনিক ধারণাকে সিলমোহর দিতে, শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া এলাকাতেই গড়ে উঠেছে উত্তরকন্যা নামক দ্বিতীয় প্রশাসনিক দপ্তর। জেলার শৈলশহর দার্জিলিংয়ে (Darjeeling) রয়েছে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের গ্রীষ্মকালীন কার্যালয় রাজভবন। বিচার বিভাগীয় বিকেন্দ্রীকরণের ফলস্বরূপ পার্শ্বস্থ জলপাইগুড়ি জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মহামান্য হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ। আইন বিভাগীয় বিকেন্দ্রীকরণকে নতুন রূপ দিতে বর্তমান সময়ের যথার্থ দাবি হল শিলিগুড়িতে রাজ্যের দ্বিতীয় বিধানসভা ভবন গড়ে তোলা।
রাজ্য বিধানসভার গ্রীষ্মকালীন অধিবেশনগুলি শিলিগুড়ির মনোরম পরিবেশে মনোগ্রাহী হয়ে উঠবে। সংযুক্ত ও নিবিড় দৃষ্টিভঙ্গির সরকারের কাছে, এই হল সময়ের দাবি। দুয়ারে সরকারের নীতিকে, আরও শক্তিশালী করতে, দ্বিতীয় বিধানসভা শিলিগুড়িতে প্রতিষ্ঠা পেলে উত্তরকন্যা, দ্বিতীয় সচিবালয় হিসাবে অনেক বেশি কার্যকর ও সক্রিয় হবে। বঞ্চনাজনিত আঞ্চলিক ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিরাময়ে, রাজনীতির মূলস্রোতের সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের সংযুক্তির প্রশ্নে, শিলিগুড়িতে দ্বিতীয় বিধানসভা ভবন অনুঘটকের কাজ করবে। দ্বিতীয় বিধানসভা ভবন প্রতিষ্ঠা, কার্যকর হলে আমাদের রাজ্য সরকার অন্যান্য রাজ্যগুলির সামনে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারবে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালে শিলিগুড়ির ভূ-অবস্থানগত এবং কৌশলগত গুরুত্ব প্রশ্নাতীত। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ি চিকেন নেকের অংশ। জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্নে শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ভারতীয় সেনা ও বায়ুসেনা শিবির। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মায়ানমার সহ তিব্বতীয় চিনের প্রবেশদুয়ার আজকের শিলিগুড়ি। জাতীয় মহাসড়ক, রেলপথ ও আকাশপথে সরাসরি সংযুক্ত এই শহর। জাতীয় স্বার্থের নিরিখে শিলিগুড়ির গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান। বিস্তৃত চা বাগান, নিকটস্থ পাহাড়ি অঞ্চল ও বনভূমি, শিলিগুড়িকে গড়ে তুলেছে পরিবেশবান্ধব ও অতিথিবৎসল শহর। শিলিগুড়ির নগরায়ণের গতি, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারত সহ এশিয়া মহাদেশের যে কোনও শহরের কাছে ঈর্ষণীয়।
দার্জিলিং, সিকিম, নেপাল সহ নিম্ন অসমের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র শিলিগুড়ি। এই শহরে নানান কাজে প্রতিদিন আসেন কয়েক লক্ষ মানুষ। শহরের পরিকাঠামো প্রধানত গড়ে উঠেছে ব্যক্তি পুঁজির উদ্যোগে। আবাসন, হোটেল, মল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নার্সিংহোম ইত্যাদি গড়ে উঠেছে ব্যক্তি পুঁজির উপর নির্ভর করেই। শিলিগুড়ি দ্বিতীয় রাজধানী হলে বিনিয়োগ বাড়বে। সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থানের সুযোগও।
দ্বিতীয় রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করে এখন থেকেই শিলিগুড়িকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে গড়ে তুলতে শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগী হওয়া দরকার রাজ্য, কেন্দ্র দুই সরকারেরই। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত শিলিগুড়িকে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের অধীনে নিয়ে আসা। টেবিল টেনিসের শহর শিলিগুড়িতে আন্তর্জাতিক মানের ইন্ডোর ও আউটডোর স্টেডিয়াম এবং এই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবায় এইমস তৈরি আশু প্রয়োজনীয়। উত্তরবঙ্গের মানুষের চাহিদাকে মর্যাদা দিয়ে রাজ্য সরকারের সক্রিয়তা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা, শহর শিলিগুড়িকে আরও সক্ষম করে গড়ে তুলবে তা আশা করা যায়।