সানি সরকার,শিলিগুড়ি: ‘ভোর পাঁচটায় জানালা দিয়ে এমন আলো চোখের ওপর পড়লো যে, আর ঘুমাতে পারিনি। এটা কি বর্যাকাল?’ ফুলেশ্বরী রেলগেটের কাছে একটি চায়ের দোকানে ঢুকে বিরক্তির সঙ্গে একনাগারে কথাগুলি বলেন স্থানীয় যতীন দাস। বাকিরাও তাঁর পক্ষ নেন। না নেওয়ার কোনও কারণ নেই। বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ার পরও যদি সাতসকালেই ঘাম ঝড়ে, তবে তো দক্ষিণ-পশ্চিমী মৌসুমী বায়ুর ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়!
ক’দিন আগেও যেখানে বৃষ্টির দাপটে কয়েকটি এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা দেখা গিয়েছিল, সেখানে এখন শুখা সমস্ত কিছুই। আকাশের যা মতিগতি, তাতে ঘাম ঝড়াটা সবে শুরু। আগামী দিনগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি জায়গায় বৃষ্টি হলেও তা তাপমাত্রাকে টেনে নীচে নামিয়ে দেবে, এমন কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং ওই বৃষ্টিতে অস্বস্তি আরও বাড়বে। যেমন, শনিবার বিকেলে পূর্ব বিবেকানন্দপল্লি, রবীন্দ্রনগরে একপশলা বৃষ্টি হলেও, শহর শিলিগুড়ির বাকি এলাকা থেকেছে শুষ্ক। ফলে তাপমাত্রার কোনও হেরফের হয়নি। ক’দিন আগেই উত্তরবঙ্গের গড় তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নীচে। কিন্তু এদিন তা ছাপিয়ে গিয়েছে ৩৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অনুভূতি ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি। এমনটাই বলছে আবহাওয়া দপ্তরের রিপোর্ট। আগামী কয়েকদিনও তাপমাত্রার তেমন কোনও হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে যে ভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। অর্থাৎ কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বজ্রপাত সহ বৃষ্টি হতে পারে। যেমন এদিন হয়েছে দার্জিলিং পাহাড়ে (৪.০ মিলিমিটার)। আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বৃষ্টি হবে না, তা নয়। কিন্তু বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির ব্যপ্তি এবং তীব্রতা কম থাকায় উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রা গ্রাস পাওয়ার তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। বর্তমান পরিস্থিতি চলার সম্ভাবনা রয়েছে অন্তত এক সপ্তাহ। কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কাও রয়েছে।’
কিন্তু এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হল কেন? আসলে হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে এখনও সক্রিয় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। ঝঞ্ঝাই পথ আটকেছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর। যার ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ জলীয় বাষ্পের যোগান ঘটছে না। মিলছে না ভারী বৃষ্টিও। যা ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টির চরিত্র বদলে গত কয়েক বছর ধরেই যখন বৃষ্টি হচ্ছে, তখনই এতটাই হচ্ছে যে, তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দিনের পর দিন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দক্ষিণ-পশিচম মৌসুমী বায়ু যদি অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তবে তার প্রভাব মারাত্মক হতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিদরা।তবুও গরমের থেকে বাঁচতে বৃষ্টিই চাইছে উত্তরবঙ্গ।