শিলিগুড়ি: ১২ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের নির্দেশ দিল শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতের বিশেষ পকসো কোর্ট। দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির নাম শ্যামল দেবনাথ, বাড়ি মাটিগাড়ায়। ধর্ষণের ঘটনায় গত শুক্রবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। শনিবার সাজা ঘোষণা করা হয়।
জানা গিয়েছে, শ্যামলের প্লাস্টিকের ফুলের ব্যবসা ছিল। সেই কাজে এলাকার নাবালিকাদের ডেকে এনে ওই ব্যক্তি ফুলের মালা গাঁথার কাজ করাত। অভিযোগ ছিল, গত ২০১৭ সালের ১৫ অগাস্ট শ্যামল কয়েকজন নাবালিকাকে দিয়ে ফুলের মালা গাঁথার কাজ করায়। কিন্তু ওইদিন কিছুটা কাজ করিয়ে নির্যাতিতা নাবালিকা ও তাঁর বান্ধবী ছাড়া সকলকে চলে যেতে বলে শ্যামল। সেই সময় নির্যাতিতার ১০ বছরের বান্ধবীর হাতে ২০ টাকা দিয়ে তাকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে শ্যামল। এরপর, ঘরের ভেতরে সেই ১২ বছরের নাবালিকার হাত পা বেঁধে তাকে ধর্ষণ করে ওই ব্যক্তি। ওই নাবালিকাকে যাতে বাড়িতে কাউকে এই বিষয়ে কিছু না জানায়, সেজন্য শ্যামল তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। সেই ভয়ে এক মাস ওই নাবালিকা বাড়িতে কাউকে কিছু জানানোর সাহস পায়নি।
এদিকে, এক মাস পর শ্যামল যখন আবারও ওই নাবালিকার বাড়িতে তাকে কাজের জন্য ডাকতে যায়, তখন সে ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির সদস্যদের সমস্ত ঘটনা জানিয়ে দেয়। এরপরই পরিবারের তরফে শ্যামল দেবনাথের বিরুদ্ধে মাটিগাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ শ্যামলকে গ্রেপ্তার করে। এরপর পুলিশ নাবালিকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়। পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি নেয়। এর পাশাপাশি, আদালত ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে ওই নাবালিকার বান্ধবীর সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়। এর পাশাপাশি চিকিৎসকরাও আদালতে সাক্ষী দেয়। যার ভিত্তিতে বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক অনিতা মেহেত্রা মাথুর অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে এদিন সাজা ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিয়ে সরকারি আইনজীবী সুস্মিতা বসু মৈত্র বলেন, ‘পকসো আইনের ৪ নম্বর সেকশন অনুযায়ী দোষীকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ের আরও ছয় মাসের কারাদন্ডের নির্দেশ রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ৮ বছর ধরে শ্যামল দেবনাথ জেলেই রয়েছে। এই প্রসঙ্গে সুস্মিতা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারনে ট্রায়ালে কিছুটা দেরি হয়েছে। চেষ্টা করেছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্যাতিতা যাতে বিচার পায়। নির্যাতিতাকে যাতে রাজ্য সরকার ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়, সেই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।’