শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি (Siliguri) থানায় তখন প্রস্তুতি চলছে অভিযুক্তকে বের করার। বাইরে আদালতে নিয়ে যাওয়ার গাড়িও প্রস্তুত। কিছুক্ষণ পরই বের হল এক দাগি আসামি। চুরির অভিযোগে সে নাকি একাধিকবার জেলও খেটেছে। গাড়ির দিকে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে, এমনই ভেবেছিল সে। কিন্তু হঠাৎ করেই তাকে দাঁড় করিয়ে আর এক পুলিশকর্মী বায়োমেট্রিক (Biometric) মেশিন নিয়ে এল। তা দেখে থতোমতো ওই আসামি। বলা যায় না, স্যরেরা মনে হয়, কোনও বিশেষ শাস্তি দেবেন! মনে তখন এই আশঙ্কা। পুলিশকর্মী তার আঙুল বাড়াতে বলতেই আরও অবাক। বায়োমেট্রিক মেশিনে আঙুলের ছাপ স্ক্যান হতেই স্ক্রিনে ফুটে উঠল আসামির ছবি। ‘স্যর এই ছবি দিয়ে কী হবে?’ প্রশ্ন শুনে পুলিশকর্মী খানিকটা কড়া সুরে বললেন, ‘এবার তোমার নাম সার্চ করলেই কাজকর্মের ইতিহাস বেরিয়ে আসবে।’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Courtroom) থেকে প্রতিটি থানাতেই ধৃতদের হাতের ছাপ ও আধার কার্ডের নম্বর নেওয়ার নির্দেশ এসেছে। সেই নির্দেশ মতো চলতি সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু হয়েছে। সেজন্য প্রতিটি থানায় বায়োমেট্রিক মেশিন দেওয়া হচ্ছে। বুধবার শিলিগুড়ি থানায় এব্যাপারে বিশেষ আলোচনাও হয়। বায়োমেট্রিক মেশিনে ধৃতদের হাতের ছাপ নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য কী, তা বোঝানোর জন্য এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের এক কর্তাকে এব্যাপারে বিশেষ দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। বুধবার তিনি শিলিগুড়ি থানার পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম ও মহিলা থানার পুলিশকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ছাপ সংগ্রহের পদ্ধতি সহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করেন তিনি।
পুলিশের এক কর্তা বলছিলেন, ‘অনেক সময় কোনও ব্যক্তিকে পাকড়াও করার পর তার বিরুদ্ধে অন্য কোথাও কোনও অভিযোগ নথিভুক্ত রয়েছে কি না, সেই তথ্য জোগাড়ে বেগ পেতে হয়। অনেক সময় আসামির বাড়ি খুঁজে পেতেও সমস্যায় পড়তে হয় পুলিশকে। বায়োমেট্রিক মেশিনে সেই সমস্যা মিটবে।’ এছাড়া আধার কার্ডের নম্বরও নেওয়া হচ্ছে। আসামির অন্য তথ্যের সঙ্গে আধার নম্বরও যুক্ত করা হচ্ছে। এরপর যাবতীয় তথ্য আপলোড করা হচ্ছে পুলিশের নিজস্ব পোর্টালে।
পুলিশ সূত্রে খবর, পরবর্তীতে যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফের গ্রেপ্তার হয়, তখন পোর্টালে নাম দিয়ে সার্চ করলেই তার যাবতীয় তথ্য বেরিয়ে আসবে। পাশাপাশি নতুন অপরাধের তথ্যও যুক্ত হবে। পোর্টাল থেকে দেশের যে কোনও থানা অভিযুক্তের সম্পর্কে তথ্য পেয়ে যাবে। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ওয়েস্ট) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, ‘বায়োমেট্রিক মেশিনে আসামিদের হাতের ছাপ নেওয়া শুরু হয়েছে। এটা আইনি প্রক্রিয়ার অংশ।’