শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : ফের কলঙ্কের কালি লাগল শিলিগুড়ির গায়ে। কলেজের অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁরই এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল শহরের মুন্সী প্রেমচাঁদ কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত জগদীশ রায় স্টেট এইডেড কলেজ টিচার (স্যাক্ট) হিসাবে নিযুক্ত। পাশাপাশি তিনি তৃণমূলের চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েতেরও সদস্য। শাসকদলের নেতা হওয়ায় ঘটনা ধামাচাপা দিতে ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই জগদীশকে কলেজে ঢুকতে নিষেধ করে দিয়েছেন পরিচালন কমিটির সভাপতি বিজয় দে। পদক্ষেপ করতে মঙ্গলবার কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
ওই অপকর্ম ঘটে ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায়। কলেজে ন্যাক দলের পরিদর্শন থাকায় এতদিন বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। শনিবার কলেজের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা জগদীশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে টিচার ইনচার্জের দপ্তরে বিক্ষোভ দেখান। তারপরই তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকা হয়েছে। ঘটনায় মানসিকভাবে েভঙে পড়েছেন ছাত্রীটি। ঘটনার পর থেকে তিনি কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কলেজের টিচার ইনচার্জ অরুণকুমার সাঁপুইয়ের কথা, ‘যে অভিযোগ উঠেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। ছাত্রী ও তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ঘটনার কথা জানার পরই অভিযুক্ত জগদীশ রায়কে কলেজে ঢুকতে বারণ করা হয়েছে। অন্য সমস্ত শিক্ষকরাও ওঁর সঙ্গে কাজ করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। পরিচালন কমিটির বৈঠকে আলোচনা করেই ওই বিষয়ে পদক্ষেপ হবে।’
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি কলেজে ন্যাক দলের পরিদর্শন ছিল। তার জন্য পদ্ধতি মেনে পড়ুয়াদের নিয়ে একটি ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যৌথভাবে সেই অনুষ্ঠান পরিচালনা করার দায়িত্ব ছিল জগদীশ এবং অভিযোগকারী ছাত্রীটির। কীভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হবে তা নিয়ে আলোচনার জন্য ঘটনার দিন বিকেলে ছাত্রীটিকে সেবক রোডের চেকপোস্ট এলাকায় ডাকেন জগদীশ। কাছাকাছি কোথাও বসার কথা বলে তাঁকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে বেঙ্গল সাফারি পার্ক লাগোয়া এলাকায় পূর্বপরিচিত একটি ক্যাফেতে নিয়ে যান। সেখানেই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয় বলেই অভিযোগ। তরুণী চিৎকার-চ্যাঁচামেচি শুরু করায় তাঁকে নিয়ে এসে সেবক রোডে নামিয়ে দেন অভিযুক্ত।
বাড়িতে ফিরেই ঘটনার কথা পরিবারের সদস্যদের জানান ছাত্রীটি। পরিবারের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে তা জানানো হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে। তরুণী নিজেই টিচার ইনচার্জকে সবটা জানান। ঘটনার কথা শোনার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিলেন কলেজের অন্য শিক্ষকরা। তবে ন্যাক দলের পরিদর্শনের জন্য সকলেই চুপ করে ছিলেন। ছাত্রীটির বাবার বক্তব্য, ‘ঘটনার পর থেকে মেয়ে ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছে। অনেক বোঝালেও কলেজে যাচ্ছে না। অভিযুক্ত শিক্ষক আমাদের বাড়িতে এসে ক্ষমা চেয়েছেন, দোষ স্বীকার করে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে মুচলেকা দেওয়ার কথাও বলেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষকে সবটা জানিয়েছি। ওরাই পদক্ষেপ করবে।’
প্রথমে জগদীশ দাবি করে তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। কিছুক্ষণ পরেই তাঁর কথা, ‘ছাত্রীটিই আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ফাঁসিয়েছে।’ পরক্ষণেই তিনি বলেন, ‘দেখা হয়েছিল। কিন্তু শ্লীলতাহানির অভিযোগ মিথ্যা। ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে মিটমাট করে নিয়েছি।’ অভিযোগের কথা সংবাদপত্রে প্রকাশ না করার জন্য ঘনঘন ফোন করে অনুরোধও করেন জগদীশ। শনিবার শিক্ষকদের বিক্ষোভের সময় কলেজে উপস্থিত ছিলেন পরিচালন কমিটির সভাপতি। তাঁর কথা, ‘আমরা সবটাই শুনেছি। মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। আমরা উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।’
ঘটনার প্রতিবাদ করায় কলেজের কয়েকজন শিক্ষককেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের নেতা, ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যের পাশে দাঁড়াননি চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জনক সাহা। তাঁর বক্তব্য, ‘ঘটনার কথা শুনেছি। তবে কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। ছাত্রীটির বাবা আমার পরিচিত। জগদীশ গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরের ভেতরে কিছু করেনি। বাইরে কী করেছে তার দায় আমাদের নয়। অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি পাবে।’