শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: সাইবার প্রতারণার ক্ষেত্রে অল্পবয়সি মহিলাদের কাজে লাগিয়ে টোপ দেওয়া কোনও নতুন ব্যাপার নয়। তবে অল্পবয়সি মহিলাকে ব্যবহার করে কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে, কোনও ট্রেডিং অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করার ‘পরামর্শ’ দিয়ে, তারপর টাকা হাপিস করে দেওয়া! প্রতারণার এই নতুন কায়দায় হতবাক সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরাও। সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে শিলিগুড়িতে (Siliguri)। শিলিগুড়ি সাইবার ক্রাইম থানায় সেই ঘটনায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
কখনও হোয়াটসঅ্যাপে আসা মেসেজের ভিত্তিতে ভুয়ো ট্রেডিংয়ের গ্রুপে যুক্ত হয়ে টাকা খোয়ানোর ঘটনা ঘটেছে। কখনও আবার ট্রেডিং শিখতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে ভুয়ো ট্রেডিং অ্যাপের খপ্পরে পড়ে অনেকেই টাকা খুইয়েছেন। এসবই বাজারচলতি কৌশল। এখন আমআদমি এসব নিয়ে সতর্ক হয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন সময় প্রচারও চালিয়েছেন। প্রতারকরাও বুঝে গিয়েছে, এই ধরনের কৌশলে বোকা বানানো আর সম্ভব নয়। সেকারণেই হয়তো এবারে নতুন পন্থা অবলম্বন করতে শুরু করেছে প্রতারকরা, মনে করছে পুলিশ।
শিলিগুড়ির ওই ঘটনায় প্রতারিতর অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথমে এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। এরপর ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর একটি ট্রেডিং অ্যাপে টাকা বিনিয়োগের কথা বলতে থাকে সেই তরুণী। তরুণীর কথামতো সেই অ্যাপে টাকা দেওয়ার পরেই অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যায়। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়েটির নাম করে খোঁজ করতেই তরুণ দেখতে পান, সেই মহিলার আরও প্রোফাইল রয়েছে। তাঁর মতো প্রতারিত হয়েছেন অনেকেই। সেসব প্রোফাইলের কমেন্টে অনেকেই লিখেছেন, ‘এটা ভুয়ো প্রোফাইল।’
ওই তরুণের বক্তব্য, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। ধীরে ধীরে কথাবার্তা বাড়তে থাকে। ও নিজেকে একটি ট্রেডিং অ্যাপের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়। বলে, ৪ বছর ধরে সে ওই অ্যাপে কাজ করছে। নিজেও ওই অ্যাপে বিনিয়োগ করে লাভবান হয়েছে।’
তারপরেই সেই তরুণীর মেসেজ আসা কমে যায়। তখন তাঁর সন্দেহ হয়। তরুণের অভিযোগ, ‘আমি পুরো টাকা চাইলে সে জানায় ৩০ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে। সেইমতো আমি নতুন করে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা দিই।’ মেয়েটিকে তিনি টাকা পাঠানোর স্ক্রিনশটও পাঠান। তারপরেও টাকা মেলেনি। চলতি মাসের শুরুতে হঠাৎ করে ওই তরুণ দেখতে পান, সেই অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে গিয়েছে।
সাইবার ক্রাইম থানার এক কর্তার কথায়, ‘এটা একেবারেই অভিনব পদ্ধতি। এভাবে ট্রেডিং সংক্রান্ত প্রতারণার অভিযোগ আমরা আগে পাইনি। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।’