শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : দিনমজুরদের কাজ দেওয়ার নাম করে চলে দেদার তোলাবাজি। ঝংকার মোড় সংলগ্ন বিবেকানন্দ মোড়ে এমনই একটি স্থানীয় চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সেখানে ভোর থেকে দাঁড়িয়ে থাকা দিনমজুরদের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও চলে আসছে ওই তরুণরা। তারা নিজেদের মতো রেট ঠিক করে দিচ্ছে। এরপর ঠিক করা দিনমজুরদের সঙ্গে তারা কাজের জায়গাতেও চলে যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে ওই দিনমজুরদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ। কিন্তু কী হিসেবে নেওয়া হচ্ছে ওই টাকা? সেটাও হচ্ছে নির্দিষ্ট একটি ফর্মুলায়। আর সেই ফর্মুলায় রাজি না হলেই মিলছে শাসানি, কাজের জন্য এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে দেওয়া হচ্ছে হুমকি।
গোটা ঘটনায় রীতিমতো শঙ্কিত বিবেকানন্দ মোড়ে আসা দিনমজুররা। এক দিনমজুরের কথায়, ‘কী করব? ওদের কথা না শুনলে আমরা তো কাজের খোঁজে এখানে আর আসতেই পারব না।’
শনিবার ভোরে বিবেকানন্দ মোড়ে গিয়ে দেখা যায় সার বেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দিনমজুররা। এক পুরুষ দিনমজুরির সঙ্গে কথা বলতে গেলেই লম্বা করে এক শীর্ণকায় ব্যক্তি ছুটে এলেন। কী লাগবে আপনার? প্রশ্ন করলেন সেই শীর্ণকায় ব্যক্তি। ওই ব্যক্তিকে এড়িয়ে দিনমজুর ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে যেতেই একেবারে সামনে এসে দাঁড়াল ওই শীর্ণকায় ব্যক্তি। সুর চড়িয়েই সে বলল, ‘আমার সঙ্গে কথা বলুন। আমরাই এখানে সবকিছু ঠিক করে দিই।’ কাজের খোঁজে আসা দিনমজুরও ওই ব্যক্তির মুখের কথাতেই সায় দিলেন। এরপর চলল হিসেবের কথা।
শীর্ণকায় ব্যক্তির সঙ্গে তখন আর এক ‘দাদা’ গোছের ব্যক্তিও হাজির। দুজন মিলে জানিয়ে দিল, সাতদিনের জন্য লাগবে ৫০০০ টাকা। সঙ্গে এটাও বলল, প্রথম দুইদিনের টাকা অগ্রিম দিতে হবে। সেই টাকা ওই দিনমজুরকে দিতে যেতেই হাত বাড়িয়ে বসল ওই দুই তরুণ। কার্যত টাকাটা ছিনিয়ে নিল তারা। কিন্তু এই টাকা তো ওই দিনমজুরের পাওয়ার কথা?
প্রশ্ন করতেই ওই দুজন বলে উঠল, ‘এসব আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি কম টাকায় পেয়ে যাচ্ছেন। সেদিকেই নজরটা রাখুন।’ এরপরই তাদের প্রশ্ন, কোথায় কাজ করাবেন আপনারা? আমরাও যাব, যাতে পরবর্তীতে কোনও সমস্যা হলে, সেটা আমরা সামলে দিতে পারি। আসলে এর পেছনেও রয়েছে, ওই ‘দাদা’দের আলাদা এক ফন্দি। কাজ শেষের দিন সকালেই মূলত ওই দাদারা কাজের জায়গায় চলে যায়। এরপর আলাদা করে মালিকের কাছে টাকা চাওয়া হয়। সেক্ষেত্রে বলা হয়, ‘এত কাজ আপনারা করিয়েছেন। একটু বেশি টাকা দেন।’ এক দিনমজুর হতাশার সুরে বলেন, ‘কথা বলার সময় প্রথম টাকাটা ওরাই নিয়ে নেয়। এরপর শেষ দিন গিয়ে কথার জালে ফাঁসিয়ে আলাদা করে ওরা টাকা নিয়ে নেয়।’ এমনকি এ নিয়ে মাস তিনেক আগে দেশবন্ধুপাড়ায় এক রেস্টুরেন্টে কাজ করতে গিয়ে এক বয়স্ক দিনমজুরকে মারধরের অভিযোগও উঠেছিল ওই দাদাদের বিরুদ্ধে। দিনমজুরদের কথায়, অন্য জায়গায় আর কোথায় কাজ করতে যাব? তাই মুখ বুজেই সবকিছু সহ্য করতে হচ্ছে।’ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলার পিন্টু ঘোষের কথায়, ‘এরকম একটা কিছু ওই এলাকায় হচ্ছে বলে শুনেছি। প্রশাসনকে বলব, এব্যাপারটা দেখার জন্য।’