শিলিগুড়ি: ঐতিহ্যবাহী কোচবিহার রাসমেলা পরিচালনায় আর্থিক তছরুপের অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দিল রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলারকে গোটা বিষয়টি তদন্ত করে আইন মেনে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। কী পদক্ষেপ করা হল তা জানিয়ে একটি রিপোর্টও পুর দপ্তরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১১ জুন পুরসভায় সেই চিঠি পৌঁছেছে। অভিযোগ, সেই চিঠি ধামাচাপা দিয়েছেন পুর চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। নির্দেশের বিষয়টি কাউন্সিলারদের জানাননি তিনি। ৭ জুলাই পুরসভার বোর্ড মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানেও আলোচ্যসূচিতে তদন্তের নির্দেশের উল্লেখ করা হয়নি। রাসমেলা দুর্নীতি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তাতে পুর চেয়ারম্যানই মূল অভিযুক্ত। তাই ফেঁসে যাওয়ার ভয়েই কী তদন্তের চিঠি আটকাতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথ? উঠেছে সেই প্রশ্নও।
রাসমেলা দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে যখন কাউন্সিলারদের অন্ধকারে রাখার অভিযোগ উঠছে তখন রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, তিনি চিঠির উত্তর পাঠিয়ে দিয়েছেন। তদন্ত করতে বলা হয়েছে বোর্ড অফ কাউন্সিলারকে। তাহলে তাদের না জানিয়েই চেয়ারম্যান কীভাবে চিঠির উত্তর দিলেন? রবীন্দ্রনাথের সাফাই, ‘বোর্ড মিটিংয়ের আলোচ্যসূচিতে এই বিষয়গুলি থাকে না। অভিযোগের বিষয়ে উত্তর দেওয়ার জন্য আমাকে বলা হয়েছিল। সেইমতো উত্তর দেওয়া হয়েছে।’ পুরসভার কোনও আধিকারিকই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে রবীন্দ্রনাথ যে যুক্তি দিয়েছেন তা মানতে নারাজ পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলার এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান ভূষণ সিং। তাঁর বক্তব্য, ‘বোর্ড অফ কাউন্সিলারকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা না করে কোনওভাবেই চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন না। পুর দপ্তরের নির্দেশের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। কেন তিনি জানাননি তা চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইব। সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করতে দেওয়া হবে না।’ চিঠির বিষয়ে তিনিও পুরোপুরি অন্ধকারে বলেই জানিয়েছেন পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান আমিনা আহমেদ।
মেলায় স্টল বসানো থেকে কর আদায়ের ক্ষেত্রে বড়সড়ো আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্ত চেয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব, পুরসচিব, ভিজিলেন্স কমিশনার সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা করেছিলেন কোচবিহার শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্যামল চক্রবর্তী। পুর চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলার অভিজিৎ মজুমদার (রুপু) ছাড়াও পুরসভার বর্তমান ও প্রাক্তন এগজিকিউটিভ অফিসার ও ফিন্যান্স অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুর দপ্তরের চিঠির প্রতিলিপি পেয়েছেন শ্যামল। তাঁর কথা, ‘চিঠি পাওয়ার ১৯ দিন পরও পুর চেয়ারম্যান তা গোপন রেখেছেন। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে তিনি তদন্তে ভয় পাচ্ছেন। আমি নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। অভিযুক্ত পুর চেয়ারম্যান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলারকে বাদ দিয়ে তদন্ত কমিটি তৈরির দাবি জানাচ্ছি।’
কর বৃদ্ধি ইস্যুতে এমনিতেই বেশ বেকায়দায় পড়েছেন রবীন্দ্রনাথ। গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে দলেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন৷ ইতিমধ্যেই পুরসভার দশটিরও বেশি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা শাসক। এবার রাসমেলা দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য সরকারের তদন্ত করতে বলায় ল্যাজেগোবরে অবস্থা হয়েছে এক সময়কার দাপুটে তৃণমূল নেতার। তৃণমূল কাউন্সিলারদের একটা বড় অংশই দীর্ঘদিন থেকেই অভিযোগ তুলছেন, তাঁদের ব্রাত্য করে চেয়ারম্যান ইচ্ছে অনুসারে পুরসভা পরিচালনা করছেন। তাঁদের কাছে রাসমেলার তদন্তের নির্দেশ বড় হাতিয়ার। ফলে ওই ইস্যুতে চেয়ারম্যানকে চেপে ধরতে চাইছেন তাঁরা। বিরোধীরাও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলার মধুছন্দা সেনগুপ্তর কথা, ‘তদন্তের নির্দেশের বিষয়টি জানানো হয়নি। আসলে পুরসভা কার্যত চেয়ারম্যানের মর্জিমতোই চলছে। তদন্তের বিষয়ে অবশ্যই বোর্ড মিটিংয়ে জানতে চাইব।’