শিলিগুড়ি : উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রায় পাঁচ বছর রোগীকল্যাণ সমিতির কোনও বৈঠক হয়নি। এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পরিষেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। এর মূলে রয়েছে রোগীকল্যাণ সমিতির নিষ্ক্রিয়তা। এটা সম্ভবত রাজ্যের একমাত্র মেডিকেল কলেজ, যেখানে বছরের পর বছর অব্যবস্থা চলছে। অনিয়মের প্রতিবাদ করলে হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হাউসস্টাফ অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘কলেজ দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থার পুরোটাই দালালদের দখলে। কলেজের ৫০ মিটারের মধ্যে থাকা একটি বেসরকারি ফার্মাসিতে রোগীদের পাঠিয়ে টাকা লুটে নেওয়া হচ্ছে। সিনিয়ার স্যররা আসছেন না। আমরা এসব নিয়ে বলতে গেলেই হাউসস্টাফশিপ বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তাই ভয়ে সবাই চুপ থাকি।’
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এসব নিয়ে কারও কোনও হেলদোল নেই। কলেজ অধ্যক্ষ ডাঃ সঞ্জয় দত্ত হাসপাতালের পরিষেবায় খামতি মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘সবকিছু ঠিকঠাকই চলছে। রোগী পরিষেবা নিয়ে কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।’
১৯৯০ সালে তৈরি হয়েছিল উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল। ধীরে ধীরে এখানে ব্যাচেলার অফ ডেন্টাল সার্জন (বিডিএস) কোর্স চালু করা হয়। ডাক্তারি পঠনপাঠনের পাশাপাশি এখানে ধাপে ধাপে রোগী পরিষেবা দেওয়াও শুরু হয়। দীর্ঘদিন ডাঃ রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য এই মেডিকেলের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন। কোভিড পরিস্থিতির সময় থেকে অসুস্থ রুদ্রনাথ। প্রায় পাঁচ বছর এখানে রোগীকল্যাণ সমিতির কোনও বৈঠক হয়নি। গত বছর আরজি কর কাণ্ডের পর রাজ্য সরকার সমস্ত মেডিকেলের রোগীকল্যাণ সমিতি ভেঙে দিয়েছিল। পরবর্তীতে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষকে চেয়ারম্যান করে নতুন রোগীকল্যাণ সমিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজে নতুন করে রোগীকল্যাণ সমিতি তৈরির বিজ্ঞপ্তি দেয়নি স্বাস্থ্য ভবন। ফলে চিকিত্সা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে কোনও পদক্ষেপ করা যাচ্ছে না। সূত্রের খবর, রোগীকল্যাণ সমিতিতে কয়েক লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে, কিন্তু সেগুলি খরচ করা যাচ্ছে না। আর এই অবস্থায় ডেন্টাল কলেজ কার্যত দুর্নীতির আঁতুড় হয়ে উঠেছে।
এখানকার ন’টি বিভাগের সিংহভাগেই সিনিয়ার ডাক্তার অনিয়মিত। একাধিক বিভাগের সিনিয়ার ডাক্তাররা রোটেশনে কলকাতা থেকে সপ্তাহে দু’-তিনদিনের জন্য আসেন, আবার ফিরে যান। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার দায়িত্ব পুরোটাই হাউসস্টাফ এবং ইন্টার্নদের উপর পড়ছে। অথচ বহির্বিভাগে প্রতিদিন অধ্যাপক চিকিৎসকদের থাকার কথা। কিন্তু তাঁরা না আসায় ডাক্তারি পড়ুয়াদের পঠনপাঠনও কার্যত লাটে উঠেছে।
এদিকে অভিযোগ, কোনও রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলে তাঁর ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর নেওয়া হয়। আর সেই নম্বর দালালদের হাতে চলে যাচ্ছে। এরপরই দালালচক্র ফোন করে রোগীর মগজধোলাই করছে। এসব বন্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবি উঠেছে।