শিলিগুড়ি: চা বাগানগুলিকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন বাগানে ৩০ শতাংশ জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবার উত্তরকন্যা অভিযান করল পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের চা শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার কয়েক হাজার চা শ্রমিক শিলিগুড়িতে জমায়েত হয়ে উত্তরকন্যা অভিযানে সামিল হন। নর্থবেঙ্গল ইউনাইটেড ফোরাম ফর আদিবাসী রাইটস আয়োজিত এই অভিযানে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির তরফে সহযোগিতা করা হয়। চা বাগানের জমিতে পর্যটনের বিরোধিতার পাশাপাশি ৫ ডেসিবেল জমির মালিকানা নিয়ে রাজ্যের তৈরি নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি করা হয়। তবে এদিনের এই উত্তরকন্যা অভিযান ছিল শান্তিপূর্ন। তিনবাত্তি মোড়ে বিরাট পুলিশ বাহিনী আগে থেকেই মোতায়েন করা ছিল। তিনবাত্তি মোড় থেকে মিছিলটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। পরে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল উত্তরকন্যায় গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন।
প্রসঙ্গত, চা বাগানগুলিকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন বাগানে ৩০ শতাংশ জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যের যুক্তি, পর্যটনের মাধ্যমে সেখানে শ্রমিকদের আয়ের পথ সুগম হবে। কিন্তু রাজ্যের সেই যুক্তি চা শ্রমিক সংগঠনগুলি মানতে চাইছে না। জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির আহ্বায়ক আশীষ কুজর কথায়, ‘রাজ্য সরকার নির্দেশিকাতে বলেছে বাগানের অব্যবহৃত জমিতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের সমস্ত বাগানে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, কোথাও এমন অব্যবহৃত জমি নেই। খালি জায়গা যদি কোনওটা থেকে থাকে তা আমাদের বাড়িঘর আর চাষের জমি। সেই কারনে রাজ্যের নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হচ্ছে।’ এই প্রসঙ্গে ডুয়ার্সের চা শ্রমিক নেতা বিকাশ ওঁরাও বলেন, ‘পর্যটনের নাম করে পুঁজিবাদীদের জমি দিলে তাতে শ্রমিকদের কোনও লাভ হবে না। যার জলজ্যান্ত উদাহরণ চাঁদমনি চা বাগান। যেখানে উপনগরী গড়ার আগে বলা হয়েছিল ৮০ শতাংশ বাগানের শ্রমিকদের কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু শেষে তা হয়নি।’
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে রাজ্য সরকার নির্দেশিকা বের করে চা শ্রমিকদের ৫ ডেসিমেল করে জমির পাট্টা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তারপর থেকে উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলিতে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়েছে। ২০২৬ সালে বিধাসভা নির্বাচন রয়েছে। এমন পরিস্থিতি শাসক বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলিও শ্রমিকদের আন্দোলনকে ইন্ধন জোগাতে কসুর করছে না। অখিল ভারতীয় আদিবাসী মুক্তি মোর্চার আহ্বায়ক হেমন্ত কালকো বলেন, ‘চা শ্রমিকরা যেই কোয়ার্টারে থাকে তার জমি ৫ ডেসিমেলের বেশী। শ্রমিকরা যতটা জায়গার মধ্যে থাকে বা চাষাবাস করে সেই পুরো জমির জমির পাট্টা দিতে হবে। ৫ ডেসিবেল জমির পাট্টার নির্দেশিকা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’ পাশাপাশি শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি দেওয়ার বিষয়েও এদিন আন্দোলনকারীরা সরব হন।