তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: ব্যাংক, এসএসসি কিংবা অন্য কোনও সরকারি চাকরির পরীক্ষা, প্রস্তুতি মানেই যে মোটা টাকা খরচ করে নামীদামি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতেই হবে, তা নয়। সেই সামর্থ্য অনেকেরই নেই। তাই এমন বহু ছাত্রছাত্রী বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ মহকুমা গ্রন্থাগারে এসে প্রস্তুতি নেন। গ্রন্থাগারে ধীরে ধীরে চাকরিপ্রার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে, আর তা দেখেই খুশি হয়েছেন শিলিগুড়ি (Siliguri) জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদ (এসজেডিএ)-এর সিইও অর্চনা ওয়াংখেড়ে। তাঁর উদ্যোগেই চাকরিপ্রার্থীদের ক্লাস করাচ্ছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট এগজিকিউটিভ অফিসার সঞ্জয় মালাকার। সপ্তাহে একদিন, বৃহস্পতিবার করে তিনি পড়ুয়াদের নিয়ে এই গ্রন্থাগারেই বিকেল পাঁচটায় ক্লাস করান। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয় হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে সঞ্জয়ের। সেখানেই কারও কোনও অসুবিধে থাকলে কিংবা কোনও প্রশ্ন বুঝতে না পারলে তা চটজলদি বুঝিয়ে দেন সঞ্জয়। গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের তরফেও চাকরির প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন রকমের বইয়ের পাশাপাশি ওয়াই-ফাইয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে অনলাইনে বিভিন্ন মক টেস্ট দেওয়া যায়।
গ্রন্থাগারে পড়াশোনা করতে এসে এসজেডিএ’র এইও-র গাইডেন্সে পড়াশোনা করা যেন বাড়তি পাওনা সঞ্জিত, শুভঙ্করদের কাছে। কলেজপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জিত রায়ের কথায়, ‘চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গ্রন্থাগারে এসে সেল্ফ স্টাডি করি। পড়ার কোথাও কোনও অসুবিধা হলে এখন সঞ্জয় স্যর দেখিয়ে দেন। এছাড়াও স্যর মক টেস্ট নিয়ে থাকেন। ওঁর গাইডেন্সে প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে তা বুঝতে অনেক সুবিধে হয়েছে।’
চাকরির পরীক্ষার সিলেবাস, কোয়েসচন প্যাটার্ন থেকে শুরু করে যাবতীয় ‘টিপস অ্যান্ড ট্রিকস’ শেখেন ছেলেমেয়েরা। বাঁধা সময়ে কীভাবে সমস্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া যাবে সেবিষয়ে বোঝান সঞ্জয়। তাছাড়া নিয়মিত মক টেস্টের মাধ্যমে তাঁদের পরীক্ষার পরিবেশের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি।
চাকরিপ্রার্থীরাও ভীষণ আগ্রহী। গ্রন্থাগারগুলো যে পড়াশোনা করার জন্য আদর্শ জায়গা তা তাঁরা জানিয়েছেন। এই গ্রন্থাগারে পড়তে এসে সুভাষপল্লির বাসিন্দা শুভঙ্কর দত্ত বলেন, ‘কোন পদ্ধতিতে পড়তে ও লিখতে হবে তা স্যর বুঝিয়ে দিন। এছাড়াও পড়াশোনার সময় কোনওরকম অসুবিধা হলে স্যরের কাছে বুঝে নিতে পারি।’
পড়ুয়াদের এই আগ্রহ দেখে এসজেডিএ’র এইও সঞ্জয় মালাকার বলেন, ‘সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার করে আমি পড়ুয়াদের এই গ্রন্থাগারে বিকেল পাঁচটা থেকে ক্লাস করিয়ে থাকি। পড়াশোনায় কোনও সমস্যা থাকলে তা সমাধান করানো হয়। এছাড়াও আমি প্রশ্নপত্র তৈরি করে তা তাঁদের সমাধান করতে দিয়ে থাকি।’ এই সুবিধে যাতে আরও অনেক চাকরিপ্রার্থীও এখানে এসে নিতে পারেন সেজন্য চেয়ার-টেবিলের সংখ্যা বাড়ানো থেকে শুরু করে নতুন নতুন বই আনা, সবরকমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে গ্রন্থাগার আধিকারিক সৈকত গোস্বামী জানান।