শিলিগুড়ি : সরকারি স্কুলের জমি দিনের পর দিন প্রোমোটার দখল করে ঘিরে নিচ্ছেন। অথচ প্রশাসনের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। দেখছি, দেখব করেই বেশ কয়েক মাস কেটে গেল। কিন্তু স্কুলের জমি পুনরুদ্ধার হল না। প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান দিলীপ রায় বলছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে শিলিগুড়ি (Siliguri)-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত আমাদের জমি ফিরিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।’ অথচ এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান দিলীপ দুগারের বক্তব্য, ‘সংস্থার সমস্ত জমি চিহ্নিত করা রয়েছে। কোথাও কোনও জমিতে দখলদারি নেই। চাঁদমণির কোনও স্কুলের জমি নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কথা হয়নি।’ ঘটনার তদন্ত করে দ্রুত স্কুলের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে মাটিগাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সুশান্ত ঘোষ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।
মাটিগাড়ার চাঁদমণি টি এস্টেট জুনিয়ার বেসিক স্কুল এলাকার বহু পুরোনো একটি স্কুল। এখানেই ২০১১ সাল থেকে একটি জুনিয়ার হিন্দি হাইস্কুলও চলছে। নথিপত্র অনুযায়ী স্কুলের হাতে ১.০৯ একর জমি রয়েছে। এতদিন সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে স্কুলের চারপাশে বহুতল আবাসন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আর এই বহুতলের নির্মাণকারী একটি সংস্থার রাস্তার পাশে থাকা সরকারি স্কুলটিতে নজর পড়েছে। প্রথমে স্কুলটিকে রাস্তার পাশ থেকে অনেকটা ভিতরে ফাঁকা জায়গায় সরানোর চক্রান্ত হয়েছিল। সেখানে একটি তিনতলা ভবন তৈরি করে সেটি নীল-সাদা রং করা হয়। সামনে চাঁদমণি টি এস্টেট জুনিয়ার বেসিক স্কুলের নামও লেখা হয়। কিন্তু প্রশাসনের কোনও দপ্তরই ওই ভবনটি তৈরি করেনি। বরং প্রোমোটিং সংস্থা ৬০-৭০ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই ভবনটি বানিয়ে বর্তমান স্কুলটিকে সেখানে স্থানান্তর করছিল বলে জানা গিয়েছে। প্রশাসনের মদত ছাড়া একটি প্রোমোটিং সংস্থার পক্ষে এভাবে একটি স্কুল ভবন তৈরি করা যে সম্ভব নয়, সেটা স্পষ্ট। উত্তরবঙ্গ সংবাদে ধারাবাহিকভাবে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে প্রোমোটার নতুন ভবনটি ভেঙে ফেলেন।
সেই সময় প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন যে, স্কুলের ১.০৯ একর জমি রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ জমিই দখল করে প্রোমোটার ঘিরে নিচ্ছেন। স্কুলের জমি পুনরুদ্ধারের জন্য এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান এবং আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তারপরে বেশ কয়েক মাস কেটে গিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান এসজেডিএ-র চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে স্কুলের জমি ফেরতের দাবি জানানোর সময় পাননি। এরই মধ্যে ওই প্রোমোটিং সংস্থা টিন দিয়ে স্কুলের বেশিরভাগ জমি ঘিরে নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে।
সবকিছু চোখের সামনে ঘটলেও প্রশাসনের সমস্ত দপ্তর চুপচাপ বসে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চাঁদমণি এলাকায় পড়ুয়াদের অভিভাবক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।