রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে শহরে পানীয় জল পরিষেবা নিয়ে বড় ধরনের সমস্যার (Ingesting Water Disaster) আশঙ্কা করে আরও ১০টি জলের ট্যাংক কেনার ফাইলে সই করলেন শিলিগুড়ির (Siliguri) মেয়র গৌতম দেব। সিকিমে বৃষ্টি, ধস বন্ধ না হলে শহরে পানীয় জল পরিষেবা স্বাভাবিক করা যাবে না জেনে কোমর বেঁধে নামছে পুরনিগম। সোমবার বিকেল থেকেই শহরজুড়ে মাইকিং শুরু হয়েছে। পানীয় জল নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা সাধারণ মানুষকে জানান দিতে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দিচ্ছে পুরনিগম। এদিন বিকেলে পানীয় জল নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে জরুরি বৈঠকের পরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিলিগুড়ি পুরনিগম। মেয়রের বক্তব্য, ‘সিকিমে একের পর এক ড্যাম তৈরি হচ্ছে। যে কারণে তিস্তার স্বাভাবিক গতিপথ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। তিস্তা তারই প্রতিশোধ নিচ্ছে। ওপর থেকে এখন যে জল আসছে সব কাদামাটিযুক্ত। তিস্তার জলে টার্বিডিটির পরিমাণ ১০৩৭২ এনটিইউ। ওই জল পরিশোধন করলেও শহরবাসীকে খাওয়ানো যাবে না। তাই আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করছি।’
পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের তিনটি ট্যাংক চাওয়া হয়েছে। পুরনিগমের নিজস্ব ২৫টি ট্যাংক প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি পিভিসি ট্যাংকে জল ভরে ম্যাটাডোরে করে শহরে ঘোরানো হবে। সব মিলিয়ে অন্তত ৫০টি পানীয় জলের ট্যাংক মঙ্গলবার থেকে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘোরানো হবে। প্রতিদিন এক লক্ষেরও বেশি পাউচ বিলি করার পরিকল্পনা নিয়েছে পুরনিগম। শিলিগুড়ি পুরনিগমের বিরোধী দলনেতা অমিত জৈন বলেন, ‘সব পুরনিগমের ভাঁওতাবাজি। আগে থেকে বিকল্প ব্যবস্থা করা থাকলে এত সমস্যাই হত না।’
সিকিমে ব্যাপক বৃষ্টি এবং ধসের জেরে তিস্তার কাদামাটিযুক্ত ঘোলা জল বইছে। এই জল উত্তোলন করে পরিশোধন করার পরেও ঘোলাটে ভাব থেকেই যাচ্ছে। যে কারণে ওই জল সাধারণ মানুষকে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই রবিবার শহরে পানীয় জল পরিষেবা বন্ধ ছিল। সোমবারও দিনভর পরিস্থিতি একই ছিল। তিস্তার জলে প্রচুর কাদামাটি থাকায় জল উত্তোলনই করতে পারেননি ফুলবাড়িতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কর্মীরা। এদিকে, এই পরিস্থিতি গোটা বর্ষাকালজুড়েই চলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে এদিন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর, পুরনিগমের পানীয় জল পরিষেবা দপ্তর সহ পদস্থ কর্তাদের নিয়ে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন গৌতম। সূত্রের খবর, আধিকারিকরা জানিয়ে দিয়েছেন, এত পরিমাণ পলি থাকলে আগামী দু’দিনও শহরে পানীয় জল পরিষেবা দেওয়া যাবে না। তাই বিকল্প ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। এরপরেই তড়িঘড়ি বাড়তি ১০টি ট্যাংক কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জরুরি ভিত্তিতে ওই ট্যাংক কেনার ফাইলে সই করেন মেয়র। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে যাতে কয়েকটি ট্যাংক পাওয়া যায় আধিকারিকদের সেই পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে ফুলবাড়ি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এলাকায় গিয়ে তিস্তার পরিস্থিতি দেখে এসেছেন পুরনিগমের আধিকারিকরা। জল স্টোর করার জন্যে পুরনিগম একটি নতুন পুকুর তৈরি করছে। সেই পুকুরের কাজও যাতে দ্রুত করা হয় সেই দিকেও নজর দিতে বলেছেন বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাকে। এদিন শহরের একাধিক এলাকায় পানীয় জলের ট্যাংক ঘুরিয়েছে পুরনিগম। তবে কিছু কিছু ওয়ার্ডে জলের ট্যাংক না পৌঁছানোয় সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। অনেককেই জল কিনে খেতে হয়েছে। শিলিগুড়ি পুরনিগমের শক্তিগড়ের একাধিক এলাকায় পানীয় জলের ট্যাংক পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা সুপর্ণা ভাদুড়ির বক্তব্য, ‘জল আসবে না বলে আগাম জানানো হয়নি। জলের ট্যাংকও তো আসেনি আমাদের এলাকায়। আমার স্বামী পাঁচ লিটারের দুটি জলের জার কিনে নিয়ে এসেছেন।’