প্রিয়দর্শিনী বিশ্বাস, শিলিগুড়ি : শিলিগুড়ি কলেজের মাঠে চলছে রাজ্য স্তরের খো খো চ্যাম্পিয়নশিপ। আর তার জন্য পঠনপাঠন বন্ধ রয়েছে শিলিগুড়ি গার্লস ও বয়েজ হাইস্কুলে। এমন ঘটনায় তাজ্জব অনেক অভিভাবকই।
স্কুল বন্ধ থাকার কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, ওই দুই স্কুলে রাখা হয়েছে খো খো খেলোয়াড়দের। সেই কারণে ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি পঠনপাঠন বন্ধ রাখার নোটিশ পেয়েছে শহরের ওই দুই স্কুল।
গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অত্যুহা বাগচীর কথায়, ‘সরকারি নির্দেশিকা পেয়েছি, সেই নির্দেশিকা তো আমরা অমান্য করতে পারি না। খেলোয়াড়দের আমাদের স্কুলেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই পঠনপাঠন বন্ধ রয়েছে।’
বয়েজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল দত্তর বক্তব্য, ‘ডিআই অফিস থেকে নির্দেশিকা পেয়েছিলাম, সেই অনুযায়ী শুক্রবার থেকে বন্ধ রয়েছে পঠনপাঠন।’
১৭ জানুয়ারি থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা খো খো অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালনায় শিলিগুড়ি কলেজের মাঠে শুরু হয়েছে সিনিয়ার স্টেট খো খো চ্যাম্পিয়নশিপ (মেন্স অ্যান্ড উইমেন্স) ২০২৫ এবং ভেটেরান উইমেন্স খো খো চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫। মহিলা খেলোয়াড়দের রাখা হয়েছে গার্লসে এবং পুরুষ খেলোয়াড়দের রাখা হয়েছে বয়েজ হাইস্কুলে।
তবে শহরে এত জায়গা থাকতে কেন খেলোয়াড়দের রাখার জন্য স্কুলকে বেছে নিতে হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যুবকল্যাণ দপ্তরের কাঞ্চনজঙ্ঘা ইউথ হস্টেল, ডাবগ্রাম ইউথ হস্টেল রয়েছে শহরে। এছাড়া পুরনিগমের পান্থনিবাস, কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের ডর্মিটরি, ইন্ডোর স্টেডিয়াম সহ শহরে প্রচুর হোটেলও রয়েছে।
এত বিকল্প থাকতে কেন স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ করে খেলোয়াড়দের সেখানে রাখা হল? তা নিয়ে কথা বলতে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রাজীব প্রামাণিককে ফোন করতেই অত্যন্ত রূঢ় ব্যবহার করেন তিনি। প্রথমে বেশ কয়েকবার তিনি ফোন ধরেননি। অন্য নম্বর থেকে ফোন করলে তিনি ‘আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না, সরি’- এই বলে কেটে দেন। এরপর ফের তাঁকে ফোন করা হলে তিনি রূঢ়ভাবে বলেন, ‘স্কুল বন্ধ নেই, ক্লাস বন্ধ রয়েছে’। একথা বলেই ফোন কেটে দেন। অন্য প্রশ্ন শোনা বা তার উত্তর দেওয়ার কোনও আগ্রহ তাঁর ছিল না।
ওই দুই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘আমি তো এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। স্কুলের তরফেও আমাকে কিছু জানানো হয়নি। পঠনপাঠন বন্ধ রেখে এই কাজ আমি একেবারে সমর্থন করি না। ডিআই অফিস থেকে চিঠি এসেছে শুনেছি। কোনও সরকারি ছুটি ছাড়া পঠনপাঠন বন্ধ রাখা কাম্য নয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’
তাঁর সংযোজন, ‘আমি শহরের বাইরে ছিলাম, তবুও স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকার উচিত ছিল একবার অন্তত আমার সঙ্গে কথা বলা। তা হলে খেলোয়াড়দের থাকার জন্য অবশ্যই অন্য কোনও ব্যবস্থা করা যেত।’
বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না অনেক অভিভাবকই। সৌমিত্র সাহা নামে এক অভিভাবকের বক্তব্য, ‘পঠনপাঠন বন্ধ রেখে অন্য কাজ করা উচিত নয়।’ বিধায়ক শংকর ঘোষ বলছেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করব। বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়াই যেত।’