Siliguri | কলেজের ইউনিয়ন ফান্ড যেন মধুর ভাণ্ড

Siliguri | কলেজের ইউনিয়ন ফান্ড যেন মধুর ভাণ্ড

ভিডিও/VIDEO
Spread the love


সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: কেউ দশ বছর কেউ বা ১২ বছর আগে কলেজে পাঠ চুকিয়েছেন। কলেজে পড়াকালীন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করায় অনেকেই নেতা হিসাবে পরিচয় দিতেন। কলেজের সেই পড়ুয়ারা আজ ‘বুড়ো’। কিন্তু কলেজে কোনও অনুষ্ঠান হলে তাঁরাই যেন সর্বেসর্বা। কারা অনুষ্ঠানে গান করবেন, লাইট বা সাউন্ড সিস্টেমের বরাত পাবেন, সেসব ‘বুড়ো’ নেতারাই ঠিক করেন। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ অবধি মঞ্চে উঠে কর্তৃত্ব দেখান এই বুড়ো ছাত্র নেতারাই। প্রশ্ন উঠতে পারে, কলেজ ছাড়ার এত বছর পরও কীসের টানে ওই বুড়োরা কলেজে পড়ে থাকছেন? ক্ষমতা দেখানো, নাকি অন্য কোনও স্বার্থে রয়েছেন, এই প্রশ্নও উঠছে।

শিলিগুড়ি (Siliguri) কলেজের সোশ্যালের অনুষ্ঠান চলাকালীন যাঁদের বিরুদ্ধে গণ্ডগোল পাকানোর অভিযোগ উঠেছে তাঁরা অনেকে আগে কলেজের পাঠ চুকিয়েছেন। শিলিগুড়ি কলেজে প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম সিমেস্টারের পড়ুয়াদের প্রতি বছর ১৫০ টাকা করে দিতে হয়। কলেজে তিন সিমেস্টার মিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার পড়ুয়া রয়েছেন। হিসাব বলছে, প্রতি বছর কলেজের স্টুডেন্ট ফান্ডে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা জমা হয়। কমার্স কলেজে আবার তিনটি সিমেস্টারের পড়ুয়াদের থেকে ২৫০ টাকা করে নেওয়া হয়। ওই কলেজে সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার পড়ুয়া রয়েছে। সেই হিসাবে স্টুডেন্ট ফান্ডে প্রতি বছর সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা জমা হয়। শিলিগুড়ি কমার্স কলেজের প্রাক্তন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা সঞ্জীব ঘোষ বলেন, ‘এই বুড়ো নেতাদের অনেকের নজর ইউনিয়নের টাকার দিকে থাকে। এই টাকা নিয়েই যত ঝামেলা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এই হাল দেখে আমরা লজ্জিত। কলেজের অনুষ্ঠান সামলাতে মেয়রকে যেতে হচ্ছে, তা সত্যি লজ্জার।’

সঞ্জীবের মতো অনেক তৃণমূল নেতা একই মত প্রকাশ করেছেন। এক তৃণমূল নেতার কথায়, কলেজে এসে কেউ কেউ ক্ষমতা দেখায়। আর নিজস্ব স্বার্থের জন্য বাইরে গিয়ে সেই ক্ষমতা দেখিয়ে সুবিধা করতে চায়।

যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগ মানতে নারাজ। শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ সুজিত ঘোষ বলেন, ‘ছাত্র সংসদ না থাকায় সমস্ত টাকা কলেজের কালচারাল কমিটির মাধ্যমে খরচ হয়। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সোশ্যালের মতো অনুষ্ঠানের আগে শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ মেনে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। সাউন্ড, লাইট, স্টেজ যেসব সংস্থা সরবরাহ করেছে তারা কোটেশন জমা দিয়েছে। যাদের রেট কম তাদের কাজ দেওয়া হয়েছে।’ অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘ছাত্রদের হাতে কোনও টাকা দেওয়া হয় না। অনুষ্ঠানের শিল্পীদের এনইএফটি করে টাকা দেওয়া হয়।’

বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতারা অধ্যক্ষের যুক্তি মানতে রাজি হননি। এসএফআইয়ের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক অঙ্কিত দে বলেন, ‘কাটমানি খেয়ে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া হয়। টিএমসিপি’র নেতারা সর্বত্র কাটমানি খাচ্ছেন। কে টেন্ডার পাবে তা আগে থেকে সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। সেই কাটমানির জন্যই কলেজে মারামারি হয়েছে।’ এবিভিপি’র শিলিগুড়ি মহানগরের নেতা অনিকেত দে সরকারের কথায়, ‘টাকা নিয়ে তৃণমূলের সর্বত্র মারামারি। প্রাক্তনীদের কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের লোগো লাগিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে। কলেজে সরকারি অনুষ্ঠানে কী করে তৃণমূলের লোগো থাকে?’

যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তনয় তালুকদার অভিযোগ মানতে রাজি হননি। তনয়ের কথায়, ‘ইউনিয়ন ফি বলে কিছু নেই। কলেজে এখন কালচারাল ফি নেওয়া হয়। প্রতিটি কলেজের কালচারাল কমিটির মাথায় একজন করে শিক্ষক থাকেন। টাকার জন্য যে মারামারি হয়েছে, সেই যুক্তি সম্পূর্ণ অবাস্তব। যে ঘটনা হয়েছে তা জেলা কমিটি সুষ্ঠুভাবে সামাল দিয়েছে।’

শিলিগুড়ির প্রায় প্রতিটি কলেজে গেলেই প্রাক্তনীদের দাপাদাপি চোখে পড়ে। শিলিগুড়ি কলেজের সোশ্যালের প্রথম দিন মঞ্চে গৌতম দেবের পাশে যাঁরা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের সিংহভাগ অনেক আগে কলেজের পাঠ চুকিয়েছেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষগুলি দাবি করেছে, কলেজের অনুষ্ঠানগুলি বর্তমান পড়ুয়ারা আয়োজন করে। কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ রঞ্জন সরকার বলেন, ‘প্রাক্তনীরা অনুষ্ঠানে থাকে না। বর্তমান পড়ুয়ারাই সবটা করেছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *