শিলিগুড়ি: সিংগিং বারের আড়ালে চলছে ‘ডান্সিং বার’। বারের স্টেজে গায়িকাদের পারফর্ম করার মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য ‘বিশ্রাম’ দেওয়া হচ্ছে। সেই বিশ্রামের সময় কয়েকজন স্বল্পবসনা তরুণী স্টেজে উদ্দাম নাচছেন। সেই নাচ দেখার উৎসাহে উড়ছে টাকাও। গায়িকারা গান গাওয়ার সময়ও ওই তরুণীরা হাতের ইশারায় বারের মধ্যে বসা লোকজনকে আকর্ষণ তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পছন্দ হলে নির্দিষ্ট রেটে বিশেষ সঙ্গ দিচ্ছেন ওই তরুণীরা। এনিয়ে আবার মাঝেমধ্যে বারে আসা দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে। সেই ঝামেলা হাতাহাতির পর্যায় চলে থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়াচ্ছে। এক সিংগিং বারের ম্যানেজার তো বলেই বসলেন, ‘লোক টানতে এসব একটু-আধটু করতেই হয়।’
শহর শিলিগুড়িতে বিভিন্ন হোটেলের পাশাপাশি মাটিগাড়ার একটি শপিং মলে রয়েছে সিংগিং বার। সেখানে দেখা গেল, একদল তরুণী গায়িকার গানের সঙ্গেই নেচে চলেছেন। নাচার সময় সামনে বসা লোকজনকে প্রকাশ্যেই টার্গেট করা হচ্ছে। কেউ একটু উৎসাহ দেখালেই চোখ বা হাতের ইশারায় কাছে আসতে বলা হচ্ছে। বার ম্যানেজারের দাবি, ‘পাব কালচারে সিংগিং বারগুলো এখন অনেকটাই ব্যাক ডেটেড হয়ে গিয়েছে। তাই আকর্ষণ বাড়াতে বিশেষ কিছু করতে হয়।’
সেবক রোডের একটি হোটেলের সিংগিং বারে ঢুকতে আবার অন্য দৃশ্য নজরে পড়ল। স্টেজের মধ্যে কয়েকজন গায়িকা বসে রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে স্বল্পবসনা কয়েকজন তরুণী। গায়িকাদের গানের মধ্যেই তাঁরা হাতের ইশারায় বারে আসা লোকজনকে ডাকছিলেন। কিছুক্ষণ পরে গায়িকাদের বিশ্রাম দেওয়া হল। তখন গায়িকারা স্টেজের পিছনের সারিরা। স্টেজের সামনে দুই তরুণী এসে নাচ শুরু করলেন। সেই নাচ যাতে কেউ ভিডিও না করতে পারেন, সেজন্য ওই বারে কয়েকজন বাউন্সারও রয়েছেন। তাঁদের হাতে রয়েছে মোটা টাকার বান্ডিল। নাচ দেখে উৎসাহী অনেকে টাকার অঙ্ক বললেই সেইমতো টাকা তাঁদের হাতে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর সেই টাকা উড়ে গিয়ে পড়ছে ওই তরুণীদের গায়ে। সেইসময় আবার কখনো-কখনো দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলাও লেগে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতেই একটি হোটেলের সিংগিং বার থেকে বেরিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা লাগে। যদিও পুলিশ আসার আগেই দু’পক্ষই সেখান থেকে পালিয়ে যায়। মাস কয়েক আগেও সিংগিং বারে তৈরি হওয়া এই ঝামেলার জেরে বারের শৌচালয়ের মধ্যেই হাতাহাতি হয়। পরবর্তীতে থানায় অভিযোগ দায়েরও হয়।
এই মনোরঞ্জনের টানেই বিহার থেকে প্রতি শুক্রবার রাতে একশ্রেণির অর্থবান শিলিগুড়ি বা তার আশপাশের এলাকায় চলে আসছেন। এসবের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, সিংগিং বারের লাইসেন্স নিয়ে ডান্স বার চললেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক অওধ সিংহল বলছেন, ‘আমরা বিষয়টা দেখছি। পুলিশ প্রশাসনকেও বিষয়টা দেখতে হবে।’ শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ইস্ট) রাকেশ সিং বলছেন, ‘আমাদের কাছে নির্দিষ্ট করে কোনও অভিযোগ এলে আমরা অবশ্যই অভিযান চালাচ্ছি। মাঝেমধ্যে আমরা সারপ্রাইজ রেইড-ও করছি।’