শিলিগুড়ি: কলেজ পড়ুয়াদের কুকথা বলায় অভিযুক্ত দুই মহিলার বাড়িতে ঢুকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন মোড়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই চর্চায় আসা সুরজ দার্নালের দাবি, অজয় এডওয়ার্ডের লোকেরাই গত মঙ্গলবার মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে। ভিডিওতে কুকথা বলায় অভিযুক্ত লীলা দত্তকে ঘুসি মারতে দেখা গিয়েছিল এক তরুণীকে। সেই তরুণীও অজয়ের দলের সদস্য বলে তিনি দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। আমি ওই দুই মহিলার জাতিবিদ্বেষমূলক কথা বলার বিরুদ্ধে ওইদিন শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে গিয়েছিলাম।’ অজয় এডওয়ার্ডের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।
এদিকে, মেয়র গৌতম দেব শুক্রবার শহরের শান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থে ইতিমধ্যেই স্বঘোষিত দু’পক্ষকেই মিছিল না করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। যদিও দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়। শনিবার চেকপোস্ট থেকে দার্জিলিং মোড় পর্যন্ত মিছিল করা হবে বলে জানিয়েছেন সুরজ। সেই মিছিল হলে আইনশৃঙ্খলার ওপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় শহরের এক বাসিন্দা সংগ্রাম ঘোষ পুলিশ কমিশনারেটে চিঠি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘পাহাড়-সমতলের মানুষকে একসঙ্গেই থাকতে হবে। পেছন থেকে কিছু নেতার মদতে এমনটা হচ্ছে।’
গৌতম এদিন অবশ্য কোনও পক্ষকে ডেকে কথা বলেননি। গৌতমের বক্তব্য, ‘পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলব।’ রাজ্য সরকারের সঙ্গেও এব্যাপারে কোনও কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন গৌতম। গোটা বিষয় নিয়ে চাপে রয়েছে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশ। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ইস্ট) রাকেশ সিং বলছেন, ‘শনিবারের মিছিলের জন্য কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। সুরজের দেওয়া মিছিলের অনুমতি সংক্রান্ত চিঠি রিসিভ করা হয়েছে। সেটাকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সে অনুমতি পাওয়া গিয়েছে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে। এই মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে আমরা নির্দিষ্ট ধারা রুজু করে মামলা করেছি। মিছিলকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শুক্রবার দিনভর সুরজই কার্যত নজরে ছিল প্রশাসনের। জাতিবিদ্বেষমূলক কথা বলার জন্য ইতিমধ্যেই সাইবার ক্রাইম থানার তরফে তাঁর বিরুদ্ধে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে চেকপোস্ট থেকে মিছিলের অনুমতির জন্য ভক্তিনগর থানায় আসেন সুরজ। এরপরই সেখানে সাইবার ক্রাইম থানার আইসি সম্রাট মিত্র এসে তাঁকে নোটিশ ধরান। পুলিশকর্তারা সুরজকে বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদও করেন। সূত্রের খবর, সুরজকে মিছিল না করার কথাও পুলিশের তরফে করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, কাশ্মীরে একটি হোটেলে শেফ-এর কাজ করেন। দু’মাসের জন্য ছুটিতে এসেছেন। জাতিবিদ্বেষমূলক মন্তব্য দেখেই তিনি প্রতিবাদ করতে এসেছিলেন।
রাজনৈতিক যোগ নিয়েও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। বিভিন্ন নেতার সঙ্গে তাঁর ছবি প্রসঙ্গে সুরজ দাবি করেন, ‘গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সামনে রেখে বিভিন্ন নেতার সঙ্গে দেখা করে দেওয়া চিঠির ছবিই ভাইরাল করা হচ্ছে।’ যদিও পুলিশ মিছিল করার কথা না বললেও তাতে রাজি হননি সুরজ। এরপর তিনি কমিশনারেটে গিয়ে চেকপোস্ট থেকে মিছিলের জন্য অনুমতি সংক্রান্ত একটি চিঠি দেন। সেই চিঠি রিসিভ করতেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি প্রচার করে দেন, মিছিলের অনুমতি মিলেছে।
সুরজ এদিন বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি জানতে পেরেছি, আমার পুরোনো ভিডিও এডিটিং করে চালানো হচ্ছে। আমি শান্তির পক্ষে। জাতিবিদ্বেষমূলক কথার প্রতিবাদে আমার মিছিল।’ এদিকে, গোর্খাল্যান্ড সংক্রান্ত স্লোগান দেওয়ায় আয়ুষ অধিকারী নামে এক তরুণের নামও উঠে এসেছে। বাগডোগরা বিমানবন্দরে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁর একটি ছবিও প্রকাশ্যে এসেছিল। সম্প্রতি বিজেপির যুব মোর্চার পদ ছেড়ে তাঁর অজয়ের দলে ঢোকার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মিলন মোড়ের ওই বাসিন্দার সম্পর্কেও খোঁজখবর শুরু করেছে পুলিশ।