Siliguri | সালিশির নামে তোলাবাজি সামাজিক সংস্থার, চক্রের শিকড় কলকাতা-মুম্বইয়েও

Siliguri | সালিশির নামে তোলাবাজি সামাজিক সংস্থার, চক্রের শিকড় কলকাতা-মুম্বইয়েও

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


মিঠুন ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি : নামে সামাজিক ও মানবাধিকার সংস্থা, অথচ কাজ গ্রামগঞ্জে সালিশির নামে তোলাবাজি। আইনের ঝক্কি এড়াতে এমন ভুঁইফোর সংস্থার হাতের পুতুল বনে যাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। আবার অনেক সময় কিছু ‘সেয়ানা পাবলিক’ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সংস্থার লোকজনকে ডেকে আনছেন। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লক তো বটেই, চক্রের জাল ছড়িয়েছে উত্তরবঙ্গের অনেক জেলাতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, চক্রের শিকড় অনেক গভীরে। কলকাতা ও মুম্বইয়েও নাকি সংস্থার অফিস রয়েছে। রাজগঞ্জে সংস্থার কাজকর্মে কেন লাগাম টানা যায়নি, কেন পুলিশ ও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না? প্রশ্ন উঠছে।

এবিষয়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (ইস্ট) রাকেশ সিং বলেছেন, ‘আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এরকম একটি বিষয় সামনে এসেছে। আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।’ ঘটনার তদন্তে নেমে গত রবিবার ধর্মনাথ রায় নামে একজনকে ডেকে পাঠায় ভোরের আলো থানা। যদিও এখন পর্যন্ত পুলিশের তরফে আর কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলেই খবর।

প্রায় দুই বছর থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল’ নামে একটি সংগঠন কাজ করছে। সংস্থার নাম শুনে ‘আর্ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত প্রাণ’ মনে হলেও বাস্তব চিত্র একেবারেই আলাদা। সংস্থার কর্মীরা আই কার্ড গলায় ঝুলিয়ে রাস্তার ঘুরে বেড়ান। ভাবসাব মাতব্বর গোছের।

বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের আদর্শপল্লির বাসিন্দা রতন বর্মন বলেছেন, ‘এলাকায় পারিবারিক ঝামেলা, জমি বিবাদ যাই হোক না কেন এই সংস্থার লোকেরা এসে মিটমাট করে দেয়।’ যেমনটা কয়েকদিন আগেই দেখা গিয়েছে জলডুমুরপাড়ার পিপুলতলায়। একটি আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সালিশির নামে এই সংস্থা তিন লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করে বলে অভিযোগ ওঠে। পনেরো দিন আগে আদর্শপল্লিতে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াও মিটিয়েছে সংস্থাটি। তার বদলে ওই পরিবার খুশি হয়ে সংস্থাকে ২০০০ টাকা দেয়। আবার মাস তিনেক আগে জলডুমুরপাড়ায় কার্তিক বর্মন নামে একজনের সঙ্গে প্রতিবেশী কয়েকজনের মারপিট হয়। কোনও পক্ষই থানা-পুলিশের ঝক্কি পোহাতে চায়নি। তাই পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। নেপথ্যে ওই সংস্থা। ঝামেলা মিটমাট করিয়ে সংস্থার এক হাজার টাকা লক্ষ্মীলাভ হয়েছে।

আবার ফাঁড়াবাড়ি এলাকার একটি পরিবারের থেকে দু’দফায় এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে। পরিবারের তরফে অনিলা বর্মন বলেন, ‘বৌমা আমার ছেলের নামে বধূ নির্যাতনের মামলা করেছিল। তা থেকে রেহাইয়ের কথা বলে সংস্থার কর্মী ধর্মনাথ রায় প্রথমে পঁচিশ হাজার এবং পরবর্তীতে এক লক্ষ টাকা নিয়েছে।’ যদিও বিষয়টি চাউর হতেই সংস্থার তরফে দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সংস্থার তরফে অরূপকুমার বিশ্বাসের সাফাই, ‘ধর্মনাথ আগে আমাদের সঙ্গে থাকলেও বিভিন্ন অবৈধ কাজের জন্য তাকে সংস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ সংস্থার অপর সদস্য সোনামণি রায়ও ধর্মনাথের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছেন। যদিও খুশি হয়ে কেউ কিছু দিলে সেটা নেওয়া হয় বলে নিজেই জানিয়েছেন অরূপ। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘ঝামেলার মীমাংসা করে দিলে লোকে আমাদের খুশি হয়ে কিছু টাকা দিয়ে থাকে। আমরা সেই অর্থে বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্ম করে থাকি।’ কিন্তু এভাবে সালিশি বসিয়ে কি টাকা আদায় করা যায়? সদুত্তর দেননি অরূপ। অন্যদিকে, টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ধর্মনাথ। তাঁর বক্তব্য, ‘সালিশি বসানো বেআইনি হলেও মানুষের সুবিধার জন্য আমরা মীমাংসা করিয়ে থাকি।’ এদিকে, সংস্থাটি বহালতবিয়তে নিজেদের কাজকর্ম চালালেও, বিষয়টা কি স্থানীয় নেতা বা পুলিশের পুরোপুরি অজানা? প্রশ্ন তুলছে আমজনতা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *