শিলিগুড়ি: পূর্ব সিকিমের নান্দক। পাহাড়ের ছোট্ট একটা গ্রাম। দেশের আর পাঁচটা গ্রামের মতোই সেখানেও পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে হয় মেয়েদের। এমনই এক মেয়ের লড়াইয়ের গল্প ক্যামেরায় ধরেছেন পাহাড়ের আরেক কন্যা ত্রিবেণি রাই। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের আঙিনায় তাঁর সিনেমা ‘শেপ অফ মোমো’ স্বীকৃতি পেয়েছে।
ত্রিবেণি কলকাতায় সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের (এসআরএফটিআই) প্রাক্তনী। হংকং ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে জিতে নিয়েছেন ‘এইচএএফ গোজ টু কানস’ অ্যাওয়ার্ড। সিকিম (Sikkim) এবং উত্তরবঙ্গের পাহাড় অঞ্চলে তিনিই প্রথম মহিলা পরিচালক, যাঁর ছবি আন্তর্জাতিক স্তরের চলচ্চিত্র উৎসবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ত্রিবেণি কয়েকবছর দার্জিলিংয়েও পড়াশোনা করেছেন।
ছবিটি বানাতে গিয়ে ত্রিবেণিকে ঠিক কোন বিষয়টি অনুপ্রাণিত করেছে? বললেন, ‘পিতৃতান্ত্রিক সমাজে আমার বড় হয়ে ওঠা। দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাই আমার ছবি বানানোর অনুপ্রেরণা।’ তারপরেই তিনি বলেন, ‘আজও এমন কিছু কিছু মুহূর্ত আমার জীবনে আসে, যখন মনে হয় আমায় বিশ্বাস করানো হচ্ছে যে আমি মানুষ কম। এটা কিন্তু আমি মেয়ে বলেই।’
ত্রিবেণির বাবা-মা দুজনেই গ্রামে শিক্ষকতা করতেন। তাঁরা চার বোন। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে খানিকটা থেমে যান এই পরিচালক। তারপর বলেন, ‘আমি দেখেছি, বাড়ির সব পুরুষ সদস্যের খাওয়া শেষ হওয়ার পর মা খেতে বসতেন। আমি বারবার এই ধরনের অনুশীলনকে প্রশ্ন করেছি।’ তিনি দেখেছেন, তাঁর সমাজ সবসময় মেয়েদের থেকে ছেলেদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আর এসবই পরবর্তীতে তাঁর গল্প বলার রসদ হয়ে ওঠে। পাহাড়ের মেয়েদের গল্প।
নেপালি ভাষার ছবি ‘শেপ অফ মোমো’ ইতিমধ্যেই জাতীয় স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২৩ সালে গোয়ায় আয়োজিত এনএফডিসি ফিল্মবাজার চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পায় ত্রিবেণির ছবি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এবার আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পাওয়ায় যেন স্বপ্নপূরণ হল এই পাহাড়-তনয়ার।
কলকাতায় এসআরএফটিআইতে পড়াশোনার সুযোগ তাঁকে সিনেমার এক অন্য দুনিয়ায় নিয়ে গিয়েছে বলে জানালেন ত্রিবেণি। তাঁর কথায়, ‘এসআরএফটিআই আমায় বিশ্ব সিনেমার দরবারে এনে হাজির করেছে।’ সিকিমে চলচ্চিত্রচর্চা এখনও ভ্রূণাবস্থায় রয়েছে বলে মনে করেন এই পাহাড়-কন্যা। তিনি চান, তাঁর মতো আরও অনেক মেয়ে পাহাড়ের গ্রাম থেকে সিনেমার জগতে উঠে আসুক। নিজেদের গল্প বলুক।
চলতি বছর ১৩ থেকে ২১ মে কানস ফেস্টিভালের ‘মার্চে দু ফিল্ম’ আয়োজিত হতে চলেছে। সেখানেই প্রদর্শিত হবে ত্রিবেণির ছবি ‘শেপ অফ মোমো ’। আপাতত তার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই সিকিম-তনয়া।