উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: দু’কামরায় একতলা বাড়ি। বাবা-মায়ের সঙ্গে সেখানেই ভাই বোনের বাস। বাবা সরকারি কর্মচারী আর মা ছিলেন গৃহবধূ। এহেন সাদামাটা পরিবার থেকেই আজ সারা ভারতের নজরে শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu Shukla)। শুভাংশু ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখত আকাশ ছোঁয়ার। অবশেষে তাঁর হাত ধরে আজ আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশের পথে ভারত। ভারতীয় সময় দুপুর ১২.১ মিনিটে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ৩৯ বছরের যুবক। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী থাকলেন ১৪০ কোটি ভারতবাসী সহ তাঁর বাবা-মা ও স্ত্রী। মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার আগে শুভাংশুর পরিবারের আবেগঘন মুহূর্তের ছবি মন জিতে নিল নেট নাগরিকদের।
১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর, লখনউয়ের একটা অত্যন্ত সাদামাটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন শুভাংশু শুক্লা। বাবা শম্ভুদয়াল শুক্লা সরকারি চাকরি করতেন। মা ছিলেন গৃহবধূ। লখনউয়ের সিটি মন্টেসরি স্কুলে শুরু হয় তাঁর ছাত্র জীবন। সেই ছোট থেকেই মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখত মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা ছেলেটি। স্বপ্নপূরণ করার লক্ষ্যে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন শুভাংশু। প্রথমবারেই সফল। চাকরি পেলেন নৌসেনা আধিকারিকের পদে। ২০০৫ সালে বিটেক করেন। ২০০৬ সালে যোগ দেন বায়ুসেনায়। ফাইটার পাইলট, টেস্ট পাইলট হিসাবে তাঁর আকাশ ছোঁয়ার প্রথম স্বপ্ন পূরণ হওয়া এখানেই। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গিয়েছেন নিজের লক্ষ্যে। এয়ারফোর্সে শুভাংশু যোগ দেওয়ার পর তাঁর কর্মদক্ষতা সকলের নজর কাড়ে। এক বছরের মধ্যেই তিনি মিগ ২১, মিগ ২৯ সহ বেশ কয়েকটি বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেন। প্রায় ২০০০ ঘণ্টা উড়ানের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এরই মাঝে ২০০১ সালে কামনা মিশ্রের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন শুভাংশু। পেশায় দন্ত চিকিৎসক কামনার সঙ্গে তাঁর পরিচয় লখনউয়ের স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। ডিফেন্স অ্যাকাডেমির পরীক্ষায় পাশ করার পরই পরিবারকে জানিয়েছিলেন তাঁদের সম্পর্কের কথা। বর্তমানে তাঁদের একটি তাঁদের একটি ছয় বছরের ছেলেও রয়েছে।
এদিন শুভাংশু যখন মহাকাশ যানের ভেতর স্পেস স্যুট পরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তখন বাইরে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছছেন ‘গর্বিতা’ স্ত্রী। মহাকাশ যাত্রার আগে স্বামীকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন কামনা। প্রোটোকল অনুযায়ী তাঁকে ছোঁয়া না গেলেও এপার থেকেই ভালোবাসার মানুষের জন্য মন কেঁদে উঠেছিল। অন্যদিকে, ছেলের সাফল্যে চোখের জল মুছতে দেখা গেছে শুভাংশু শুক্লার বাবা-মাকেও। তবে যাকে নিয়ে এই কাণ্ড তিনিও পরিবারের অবদান স্বীকার করতে ভুললেন না। আকাশ ছোঁয়ার আগে নিজের কর্মক্ষেত্র, দেশবাসী ও পরিবারের উদ্দেশে লিখলেন, ‘এই মিশনে যাঁরা যুক্ত আছেন তাঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ। যাঁরা বাড়িতে বসে আমাদের জন্য প্রার্থনা করছেন তাঁদেরকেও আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। তবে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাব আমার স্ত্রী কামনাকে। এত ভালো জীবনসঙ্গী হওয়ার জন্য। তুমি না থাকলে কোনও কিছুই সম্ভব হতো না। সব থেকে বড় কথা কোনও কিছুর এতটা গুরুত্ব থাকত না।’