উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টার অভিযোগে ২২ বছর বয়সী আইনের ছাত্রী ও নেটপ্রভাবী শর্মিষ্ঠা পানোলিকে (Sharmistha Panoli) হরিয়ানার (Haryana) গুরুগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ। এই গ্রেপ্তারির পর থেকেই বিভিন্ন মহলে কলকাতা পুলিশের পদক্ষেপের সমালোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) নিয়ে গত ১৪ মে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন কলকাতার আনন্দপুরের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা পানোলি। সেই ভিডিওতে তিনি বলিউডের অভিনেতাদের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অভিযোগ, ভিডিওতে একটি নির্দিষ্ট ধর্ম প্রসঙ্গে ‘অবমাননাকর’ কিছু বলেছিলেন শর্মিষ্ঠা। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। অনেকেই কড়া সমালোচনা করেন শর্মিষ্ঠার বক্তব্যের। সমালোচনার মুখে ভিডিও ডিলিট করে দিয়ে ক্ষমাও চেয়ে নেন শর্মিষ্ঠা। কিন্তু কলকাতার গার্ডেনরিচ থানায় দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশ গত ৩০ মে তাঁকে গুরুগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। এদিন পুলিশ হেপাজতের আর্জি খারিজ করে তাকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেপাজতে পাঠায় আদালত।
শর্মিষ্ঠার প্রতি কলকাতা পুলিশের আচরণের সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিজেপি সাংসদ তথা অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত (Kangana Ranaut)। কঙ্গনা বলেন, ‘আমি একমত যে শর্মিষ্ঠা তার অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য কিছু অপ্রীতিকর শব্দ ব্যবহার করেছেন, কিন্তু আজকাল বেশিরভাগ তরুণ এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করে। তিনি তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন এবং এটাই যথেষ্ট হওয়া উচিত, তাকে আর হয়রানি করার দরকার নেই। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত।’ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় তিনি পশ্চিমবঙ্গকে উত্তর কোরিয়ায় পরিণত না করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। শর্মিষ্ঠার গ্রেপ্তারির তীব্র সমালোচনা করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের উপ মুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ (Paban Kalyan)। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। যেই ভিডিওতে মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি বিভাজনমূলক রাজনীতির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেছেন। এমনকি তাঁকে বলতে শোনা যায় বিজেপির ‘গন্ধা ধর্ম’ হিন্দুধর্মের প্রকৃত নীতির পরিপন্থী। কল্যাণের বক্তব্য, ‘শর্মিষ্ঠার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচিত নেতা, সাংসদরা যখন সনাতন ধর্মকে উপহাস করে, তখন লক্ষ লক্ষ মানুষের যে গভীর, তীব্র যন্ত্রণার হয়, তার কী হবে? আমাদের ধর্মকে ‘গন্ধা ধর্ম’ বলা হলে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার কোথায়?’। কলকাতা পুলিশের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যও। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ভোট ব্যাংককে তুষ্ট করার জন্য একজন হিন্দু মহিলাকে নিশানা করা হচ্ছে।’ যদিও কলকাতা পুলিশের মতে, শর্মিষ্ঠা পানোলির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের পর তাকে একাধিক আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি পলাতক ছিলেন। ৩০ মে তাকে গুরুগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন আদালত চত্ত্বরেও নিজের গ্রেপ্তারি নিয়ে সরব হয়েছেন পানোলি। আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে যেভাবে এই হয়রানি করা হচ্ছে, এটি গণতন্ত্র নয়।’