প্রণব সূত্রধর ও মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, আলিপুরদুয়ার ও বীরপাড়া: রবিবার মধ্যরাতে বীরপাড়ার দিনবাজার এলাকায় পাঁচজন নাবালিকাকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন টহলরত পুলিশকর্মীরা। তাদের উদ্ধার করে সিডব্লিউসি’র হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাদের বয়স ৯ বছর থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। জিজ্ঞাসাবাদের উত্তরে ওই নাবালিকারা জানিয়েছে, তারা সকলেই আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ার একটি আশ্রমের আবাসিক। গভীর রাতে এভাবে তারা আশ্রম ছেড়ে পালিয়ে গেল কেন? উত্তরে উঠে আসছে আশ্রমে যৌন হেনস্তার (Sexual Assault) অভিযোগের কথা। যদিও সেই আশ্রম কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বীরপাড়া থানা সূত্রের খবর, ওই নাবালিকাদের দিনবাজার এবং ক্ষুদিরামপল্লি এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছিল। খবর পেয়ে দ্রুত মেয়েগুলিকে উদ্ধার করে পুলিশ। বীরপাড়া থানার ওসি নয়ন দাস বলেন, ‘যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে সোমবার সকালে ওই নাবালিকাদের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি তদন্ত করবে।’
সিডব্লিউসির চেয়ারম্যান অসীম বসু বলেন, ‘নাবালিকা উদ্ধারের বিষয়টি সামনে আসার পর জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তরফে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই নাবালিকাদের আপাতত হোমে রাখা হয়েছে।’
বীরপাড়া থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আশ্রমটি বীরপাড়ার বড়হাওদা এলাকায় রয়েছে। প্রাথমিক কাউন্সেলিংয়ের পর নাবালিকাদের অভিযোগ শুনে চক্ষু চড়কগাছ সরকারি কর্তাদের। অভিযোগ, সেই আশ্রমে নাবালিকাদের দিয়ে হাত-পা টেপানো হত। চলত আরও নানা কুকর্ম। তবে তদন্ত চলছে বলে এখনই এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে নারাজ প্রশাসনের কর্তারা। ওই আশ্রমের কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। কীভাবে, কার অনুমতিতে এই আশ্রম চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্রের খবর, ২০১৪ সাল থেকে ওই আশ্রম চলছে। সেখানে প্রায় ৩৫ জন পড়ুয়া রয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ারা সেখানে থেকে পড়াশোনা করে। এছাড়াও নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের বাড়ি থেকে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। ওই ৫ নাবালিকার অভিযোগ, আশ্রমে তাদের বকাঝকা করা হত। ঠিকভাবে খেতে দেওয়া হত না। সেইসঙ্গে ব্যাড টাচের অভিযোগও করেছে তারা। তারপরেই জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ বিশেষ টিম তৈরি করে তদন্ত শুরু করেছে।
এদিকে, কড়া অনুশাসনের কথা মেনে নিলেও ব্যাড টাচের অভিযোগ মানতে নারাজ আশ্রম কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, আবাসিকদের ফলমূল সহ স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া হয়। তবে বাড়ির মতো পরিমাণে দেওয়া সম্ভব নয়। সেই আশ্রমের তরফে সরস্বতী শাস্ত্রী বলেন, ‘গুরুকুলে বিভিন্ন নিয়ম নির্দেশিকা মেনে চলতে হয়। তবে এখানে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
তাহলে প্রশ্ন উঠছে, গভীর রাতে ওই ৫ জন পালাল কেন? প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা নিয়েও। এব্যাপারে আশ্রম কর্তৃপক্ষের কথায় নানা অসংগতি। কখনও তারা দাবি করছে, রাতে রাঁধুনি মহিলার সঙ্গে ওই পাঁচজন বেড়াতে গিয়েছিল। পরে গুরুকুলের তরফেই ওদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কখনও আবার বলছে, একজন নাবালিকার নেতৃত্বে বাকিরা বেরিয়ে পড়েছিল।
পুলিশেরই একটি সূত্র মোতাবেক, মাস ছয়েক আগে ওই আশ্রম কর্তৃপক্ষ একজন ১৭ বছর বয়সি আবাসিক মেয়ের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর বীরপাড়া থানায় মৌখিকভাবে জানিয়েছিল। পুলিশ লিখিতভাবে থানায় অভিযোগ করতে বলে আশ্রম কর্তৃপক্ষকে। সেটা আর তারা করেনি। বীরপাড়া থানার পুলিশও আর এ নিয়ে এগোয়নি। সেই অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটি এখন কোথায় রয়েছে, কী পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা নিয়ে বীরপাড়া থানার কাছে কোনও তথ্যই নেই।