রাজু সাহা,শামুকতলা: অ্যাকশন–রিপ্লে! ঠিকঠাক বললে হয়ত আরও বেশি। বাবা ভালোবাসে না, পড়তে বসলে বই ফেলে দেন বলে কিছুদিন আগে কোচবিহারের এক প্রাথমিক পড়ুয়া স্কুলে শিক্ষকদের দেওয়া টাস্কে লিখে জানিয়েছিল। উত্তরবঙ্গ সংবাদে প্রকাশিত সেই খবর পড়ে অনেকেরই মন খারাপ হয়। এবারে আলিপুরদুয়ারের দুই খুদে যা করল তাতে মন কিছুটা খারাপ হলেও একই সঙ্গে ভালো হতেও বাধ্য। দুই বোনের একজন প্রথম অন্যজন তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। এক্ষেত্রেও বাবাই ‘মন্দ মানুষ’। দুই খুদেরই অভিযোগ, পড়াশোনা তাঁদের খুবই প্রিয় হলেও বাবা তাঁদের মোটেও পড়তে দেন না। পড়তে বসলেই বকাঝাকা করেন। ঠিকমতো স্কুলে যেতে দেন না। সময়–অসময়ে তাঁদের মায়ের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করেন।
পুলিশ খুব কড়া হলেও তাঁদের কাছে গেলেই সমস্যা মেটে বলে দুটিতে কোথা থেকে যেন জানতে পেরেছিল। সেইমতো দুটিতে পুলিশের কাছে গিয়ে হাজির। সেখানে বাবা–বৃত্তান্তের খোলসা করা। শুনে পুলিশ আধিকারিকের আক্কেল গুড়ুম। দুই খুদেকে আদর করে কাছে বসিয়ে তাঁদের বাবা–মাকে ডেকে পাঠান। তাঁদের বাবা প্রথমে অভিযোগ মানতে চাননি। পরে পুলিশের কড়া ধমকানিতে নিজের সমস্ত অপরাধ কবুল করেন। এমন ভুল ভবিষ্যতে আর হবে না বলে হাতজোর করে আশ্বাস দিলে গোটা বিষয়টির আপাতত মধুরেণ সমাপয়েত। শামকুতলা থানার ওসি জগদীশ রায় বললেন, ‘দুই খুদে নিজেরাই থানায় এসে উপস্থিত হওয়ায় অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর ওরা ওদের বাবার বিষয়ে পরে আর যা যা বলল তাতে আরও অবাক হয়ে যাই। সব শুনে খুবই খারাপ লাগছিল। ওদের বাবা–মাকে ডেকে পাঠাই। ওদের বাবা প্রথমে সবকিছু অস্বীকার করেন। পরে অবশ্য সমস্ত অভিযোগ মেনে নেন। আর কখনও দুই সন্তান ও স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পরে ওঁরা সবাই মিলে বাড়ি ফিরে যান। আপাতত সব ঠিক আছে। তবে ভবিষ্যতেও তা ঠিক থাকে কিনা তা নিশ্চিত করতে আমরা ওই পরিবারটির ওপর নিয়মিত নজর রাখব।’
যে দুই খুদেকে নিয়ে এই প্রতিবেদন তাঁরা শামুকতলা থানা থেকে কিছুটা দূরের এক এলাকার বাসিন্দা। দুই বোনের ছোটটি একটি বেসরকারি স্কুল ও অন্যটি এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনা করে। বাবা খাবার হোটেলে কাজ করেন। মা ঘরদোর সামলানোর পাশাপাশি সামান্য কৃষিকাজও করেন। সুখি পরিবার। কিন্তু বাবার মাথা গরমের সুবাদেই সেখানে মাঝেমধ্যেই ‘অসুখ’–এর হানাদারি। আর এর জেরেই মেয়েদের পড়াশোনায় বাধা সৃষ্টির পাশাপাশি স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ। দুই খুদে বহুদিন এসব সহ্য করেছে। তারপর নিজেরাই সবকিছু গিয়ে পুলিশকে খুলে বলার সিদ্ধান্ত নেয়। সেইমতো গ্রামের এক পরিচিত টোটো চালককে তাঁরা থানায় নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে। সেই টোটোচালক দুই খুদের অনুরোধ ফেলতে পারেননি। শনিবার তাঁদের সেখানে নিয়ে যান। তারপর কী হয়েছে তা পাঠকের সামনে এতক্ষণে পরিষ্কার।
স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পুলিশ অভিযুক্তের স্ত্রীকে অনুরোধ জানালেও ওই মহিলা তাতে রাজি হননি। তাঁর কথায়, ‘দুই মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে উনি নিজেকে শুধরে নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওঁকে একটা শেষ সুযোগ দিতে চাই।’ তবে এরপরও যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তবে তিনি পুলিশে অভিযোগ জানাবেন বলে ওই মহিলা জানিয়েছেন। ওসির কথায়, ‘সেক্ষেত্রে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’তবে তার আগেই ‘মন্দ বাবা’ দ্রুতই ভালো বাবায় বদলে যাবেন বলে দুই খুদের অবশ্য দৃঢ় বিশ্বাস।