সামসীঃ রাস্তার কোথাও এক হাঁটু, কোথাও আবার এক কোমর অবধি জল। রাস্তা না পুকুর চেনাই যায় না। তাই পাকা রাস্তার দাবিতে রাস্তার জমে থাকা জলে জাল ফেলে মাছ ধরে অভিনব বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন গ্রামবাসীরা। রাস্তার এক কোমর জলে নিজেদের স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের ঘাড়ে চাপিয়ে স্কুলে পৌঁছে দেন অভিভাবকরা। রবিবার এমন ঘটনাটি ঘটেছে রতুয়া-১ ব্লকের চাঁদমুনি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের খাসপাড়া (গৌরীপুর বুথ)এলাকায়। গ্রামবাসীরা প্রশাসনের কাছে হাতজোড় করে আর্তনাদ জানিয়েছেন, বৃষ্টি হোক বা খরা, অবস্থা একই। তাই প্রশাসনিক উদ্যোগে রাস্তাটি পাকা হোক। পাকা রাস্তার দাবি পূরণ না হলে বিডিও, এসডিও ও ডিএম অফিস ঘেরাও করে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
চাঁদমুনি খাসপাড়ার এক বাসিন্দা আব্দুর রহিমের অভিযোগ, গ্রামের রাস্তাটি প্রায় দেড় কিমি মত হবে। পুরো রাস্তাটায় জলকাদায় বেহাল। রাস্তার কোথাও এক হাঁটু, কোথাও আবার এক কোমর অবধি জল। রাস্তা না পুকুর চেনা ভার। সাইকেল, বাইক অন্যান্য যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেটেও চলা যায় না। এক কথায় রাস্তাটি মধ্যযুগীয় দশায় ভুগছে। সবকিছু জেনেও প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে। আর যার ফল হাড়ে হাড়ে ভোগ করছেন খাসপাড়ার কয়েক হাজার বাসিন্দা। যারপরনাই ক্ষুব্ধ গ্রামের আপামর জনসাধারণ। তাই এদিন শতাধিক গ্রামবাসী জড়ো হয়ে পাকা রাস্তার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। রাস্তায় জমে থাকা কোমর অবধি জলে মাছধরা জাল ফেলে অভিনব কায়দায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন গ্রামবাসীরা।
এদিন বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন খাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তথা পেশায় শিক্ষক রবিউল আলম। তার বক্তব্য, “বৃষ্টি হলেও ভুগি, না হলেও ভুগি। কম বেশি সারা বছরই গ্রামের রাস্তায় জল জমে থাকে। এই রাস্তাটি পাকা হলে চাঁদমুনি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা ছাড়াও পরানপুর ও ভাদো গ্রাম পঞ্চায়েতের কিয়দংশ বাসিন্দা উপকৃত হবেন। বেহাল রাস্তার দরুণ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদেরও। বর্তমানে বেহাল রাস্তার দরুণ কার্যত অবরুদ্ধ গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, গ্রামের রাস্তাটি পাকা করার জন্য একাধিকবার পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, বিডিও এমনকী এলাকার বিধায়ক-সাংসদকেও বলা হয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই জোটেনি।
গ্রামের আরও এক বাসিন্দা এজাজুল হকের বক্তব্য, চাঁদমুনি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের খাসপাড়া মূলত কৃষি প্রধান এলাকা। এই রাস্তা দিয়ে মাঠের কয়েকশো একর জমির ফসল বাড়িতে এবং বাড়ি থেকে উৎপাদিত ধান, চাল, পাট হাটে বাজারে নিয়ে যেতেও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এলাকার কৃষকদের। বেহাল রাস্তায় এলাকার ব্যবসায়ী মহলও ক্ষুব্ধ। তার আরো বক্তব্য, গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে খুব কষ্ট হয়। কেননা বেহাল রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সে চলে না। বেহাল রাস্তার দরুন স্বাস্থ্যকর্মী, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরাও চরম বিপাকে পড়ছেন।
গ্রামের আব্দুস সালাম নামের এক সত্তর বয়সী বৃদ্ধের কথায়, জন্ম থেকেই বেহাল রাস্তায় ভুগছি। এ জন্মে আর হয়তো গ্রামে পাকা রাস্তা হবে না। এনিয়ে চরম আক্ষেপ তার।
চাঁদমুনির খাসপাড়ার বেহাল রাস্তার ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। রাজ্য বিজেপির এক কার্যকর্তা অভিষেক সিংহানিয়া কটাক্ষ করে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন প্রশাসনিক সভায় ১০০ শতাংশ কাজের দাবি করলেও বাস্তবে তা কিছুই হয়নি। শুধু মিথ্যার প্রলেপ ছাড়া কিছুই নয়। বরং কাজের নাম করে দেখা গেছে এই রাস্তার টাকা হয়তো খেয়ে নিয়েছে। রাজ্যে কাটমানির সরকার চলছে।”
যদিও বিজেপির করা অভিযোগকে মিথ্যে ও ভিত্তিহীন বলে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন শাসকদলের রতুয়া-১ ব্লক সভাপতি অজয় সিনহা। তার দাবি, “খাসপাড়ার রাস্তা পথশ্রী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত। বৃষ্টির জন্য কাজ আটকে রয়েছে, আমরা কাজে বিশ্বাসী।”
চাঁদমুনি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তানজিমা খাতুন অবশ্য বলেন, “অত বড় রাস্তা পঞ্চায়েতের পক্ষে করা সম্ভব নয়। বিষয়টি বিডিও সাহেবকে বলা আছে।” রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পো জানান, “বর্ষা শেষ হলেই কাজ শুরু হবে।”