উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ সম্প্রতি একটি বড় বাণিজ্যিক পরিবর্তন আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের অন্যতম প্রধান ক্রেতা হয়ে ওঠা ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল রিফাইনারিগুলি, গত এক সপ্তাহ ধরে সেই আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের পিছনে একাধিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের পর যখন পশ্চিমী দেশগুলো রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছিল, তখন ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলো(যেমন – ইন্ডিয়ান অয়েল, এইচপিসিএল, বিপিসিএল ও এমআরপিএল) রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ছাড়ে তেল কিনতে শুরু করে। এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন রাশিয়ার যুদ্ধকালীন অর্থনীতির জন্য একটি বড় ভরসা হয়ে দাঁড়ায়, তেমনি ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়া তার অপরিশোধিত তেলের উপর দেওয়া ছাড়ের পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। এই ছাড় বর্তমানে ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ফলে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা এখন আর ভারতের জন্য অর্থনৈতিকভাবে ততটা লাভজনক নয়, যেমনটা আগে ছিল। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত বিকল্প এবং আরও সাশ্রয়ী উৎসের সন্ধানে বাধ্য হচ্ছে।
অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক চাপও এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি বড় অনুঘটকের কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার জানিয়েছেন, যদি রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে কোনও শান্তি চুক্তি না করে, তবে রুশ তেল আমদানিকারক দেশগুলোর ওপর ১০০% শুল্ক চাপানো হতে পারে। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার পণ্য আমদানির ওপর ‘সেকেন্ডারি স্যাংশন’ কার্যকর করার সময়সীমাও তিনি কমিয়ে দিয়েছেন। এই আবহেই ট্রাম্প ১ অগাস্ট থেকে ভারতের পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেন, যার প্রধান কারণ হিসেবে তিনি রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত কর্তৃক তেল ও অস্ত্র কেনাকে উল্লেখ করেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকে চাপের মুখে পড়ে ভারত তার কৌশল পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। রাশিয়া থেকে আমদানি বন্ধ করে দিয়ে ভারত এখন বিকল্প বাজার খুঁজছে। সূত্রের খবর, ভারত ইতিমধ্যেই পশ্চিম আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো থেকে তেল আমদানি বাড়াতে শুরু করেছে।