উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ রবিবার রাশিয়ার ইরকুটস্ক এলাকার বিমানঘাঁটি ছাড়াও ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার নিশানায় ছিল রাশিয়ার ওলেনিয়া, ইভানোভো এবং দিয়াগিলোভো বিমানঘাঁটিও। কিন্তু ইরকুটস্কের হামলাটি আলাদাভাবে নজর কেড়েছে কারণ এই অঞ্চলটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ৪৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সুত্রের খবর, রাশিয়ার এতোটা ভেতরে ঢুকে ইউক্রেনের চালানো এই অতর্কিত হামলার কার্যত কোনও জবাব ছিল না রাশিয়ার কাছে। রবিবার রাতেই রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে এই ইউক্রেনীয় হামলার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে জানান হয়েছে যে, ইউক্রেন মুরমানস্ক, ইরকুটস্ক, ইভানোভো, রিয়াজান এবং আমুর অঞ্চলের মোট পাঁচটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তবে মুরমানস্ক এবং ইরকুটস্ক ছাড়া বাকি জায়গাগুলিতে তাঁরা ড্রোনগুলি প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানিয়েছে তাঁরা।
অপরদিকে ইউক্রেন দাবি করেছে যে, তাঁদের এই সাম্প্রতিকতম ড্রোন হামলায় রাশিয়ার অন্তত ৭০০ কোটি ডলারের সামরিক পরিকাঠামো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ইউক্রেন তাঁদের অভিযানের নাম রেখেছে ‘অপারেশন স্পাইডার’স ওয়েব’(Operation Spider’s Internet)। আর কার্যত মাকড়সার জালের মতই রাশিয়ার এতোটা ভেতরে ঢুকে তাঁরা যে ড্রোন হামলা চালিয়েছে তা এখনও পর্যন্ত তাঁদের রাশিয়ার ওপর করা সবচেয়ে বড় হামলা বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে এই ব্যাপারটিও অনেকাংশে নিশ্চিত যে, ড্রোন গুলি আগে থেকেই ওই স্থানগুলির কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। কারণ ইরকুটস্ক ইউক্রেনের থেকে প্রায় ৪৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ট্রাকে করে এবং আন্যন্য উপায়ে লুকিয়ে এই ড্রোনগুলির রাশিয়ার ভেতরে প্রবেশ করানোর একটি তথ্যও উঠে আসছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল বিভিন্ন ভিডিওতেও দেখা গিয়েছে যে, কন্টেনার থেকে উড়ে যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন(ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ)। ইউক্রেন দাবি করেছে যে, তাঁদের এই এফপিভি ড্রোনের ঝাঁক রাশিয়ার ৪১ টি বোমারু বিমান ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে,যার মধ্যে রয়েছে টিইউ-৯৫, টিইউ-২২এম এবং এ-৫০-র মতো বোমারু বিমান।
কিন্তু ইউক্রেনের এই বিদ্ধিংসী ড্রোন হামলা এই যুদ্ধে আদৌ কি তাঁদের চালকের আসনে বসালো? কারণ রবিবারের এই এফপিভি ড্রোন হামলা রুখতে রাশিয়া ব্যার্থ হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এমত পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের এই বিধ্বংসী ড্রোন হামলার প্রত্যাঘাত করতে রাশিয়া এবার মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবে বলেই মনে করছে সামরিক বিশেষজ্ঞরা। গত সপ্তাহেও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে দাবি করা হয়েছিল যে, তাঁদের সামরিক অভিযানে ইউক্রেনের অন্তত ১৪৭৫ জন সেনার মৃত্যু ঘটেছে। ডনেৎস্ক এলাকার স্টারায়া নিকোলায়েভকা জনবসতিও রুশ বাহিনী নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এর আগে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ইউক্রেন সেনার হাত থেকে কুর্স্ক ভূখণ্ড পুনর্দখল করেছিল রুশ সেনা। এই আবহে ইউক্রেনের এই অপ্রত্যাশিত হামলার জবাব দিতে এবার কতোটা মরিয়া এবং বিদ্ধংসী হয়ে উঠতে পারে রাশিয়া, সেই প্রশ্নও কিন্তু উঠছে। উল্লেখযোগ্যভাবে আজ ইস্তানবুলে যুযুধান এই দুপক্ষ পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে যোগ দিয়েছেন,উদ্দেশ্য যুদ্ধবিরতি। তবে তাঁদের এই বৈঠক কতোটা ফলপ্রসূ হয় সেটাই এখন দেখার।