তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: কলকাতায় বসে মহিনের ঘোড়াগুলি গেয়েছিল, ‘পুরোনো মিছিলে পুরোনো ট্রামেদের সারি/ফুটপাথঘেঁষা বেলুন গাড়ি/সুতোবাঁধা যত লাল আর সাদা/ওরাই আমার থতমত এই শহরের/রডোডেনড্রন…।’
সমতল শহরে বসে মহিনের কলাকুশলীরা রডোডেনড্রনের প্রশান্তি কল্পনা করলেও, সেই ফুল কিন্তু পাহাড়ের একান্ত আপন। অথচ পাহাড় কি এই ফুলের কদর করতে পারছে? এতদিন কিছুটা দ্বিধাবোধ কাজ করলেও আস্তে আস্তে যেন শীতঘুম ভাঙছে পাহাড়ের। পরিকল্পনা করেও যে রডোডেনড্রন ফেস্টিভাল (Rhododendron Competition) করে উঠতে পারেনি জিটিএ, সেটাই এবার বাস্তবের মুখ দেখার অপেক্ষায়।
ফেব্রুয়ারির শেষ। তারপর গোটা মার্চ-এপ্রিল মাস। এই দিনগুলোয় পাহাড়ি পথের শোভা বাড়ায় রডোডেনড্রন। দার্জিলিং, কার্সিয়াং, কালিম্পংয়ের রাস্তায় ইতিমধ্যেই লাল, সাদা, হলুদ, গোলাপি রংয়ের রডোডেনড্রন উঁকি দিতে শুরু করেছে। এই মরশুমে পর্যটকদের কাছে এটা বাড়তি পাওনা। সিকিমে বেশ কয়েকবছর ধরে পর্যটকদের আকর্ষিত করতে চেরি ব্লসম ফেস্টিভাল আয়োজন হচ্ছে। তবে দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের পাহাড়ে রডোডেনড্রনকে কেন্দ্র করে পর্যটক টানার কোনও উদ্যোগ সেভাবে ছিল না। তবে চলতি বছর রডোডেনড্রন ফেস্টিভালের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে জিটিএ।
কবে, কোথায়, কীভাবে ফেস্টিভাল আয়োজন করা হবে তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জিটিএ’র জনসংযোগ আধিকারিক এসপি শর্মা বলেছেন, ‘পর্যটনের পাশাপাশি পাহাড়ের অর্থনীতির দিকে নজর দিয়ে এবার রডোডেনড্রন ফেস্টিভাল আয়োজন করার পরিকল্পনা করেছি।’ বাদবাকি যাবতীয় তথ্য ধীরে ধীরে জানাবে জিটিএ।
ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে দেখা মিললেও মূলত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে পাহাড়ের রাস্তায় একেবারে ছেয়ে যায় এই ফুল। তবে সব জায়গায় নয়। সান্দাকফু যাওয়ার রাস্তায়, জলাপাহাড়ের সামনে, কার্সিয়াংয়ে ডাউহিলের রাস্তায়, কালিম্পংয়ে ডেলোর কাছে গেলে দেখা মিলবে মহিনের গানের এই রডোডেনড্রন। কার্সিয়াংয়ের রেঞ্জ অফিসার সম্বার্ত সাধু জানিয়েছেন, ডাউহিলে এই ফুলের মূলত তিনটি প্রজাতি দেখা যায়। ফুল গাছ থাকা এলাকায় রীতিমতো পেট্রলিং করা হয় যাতে কেউ ফুল নষ্ট না করে।
রডোডেনড্রন কীভাবে পাহাড়ের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পারে? জানা যাচ্ছে, এই ফুল থেকে ওয়াইন, আচার, জেলি তৈরি হয়। সেগুলি পর্যটকরাও বেশ পছন্দ করেন। তাই আরও বেশি করে যাতে স্থানীয়রা রডোডেনড্রনজাত নানা খাবার তৈরি করে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের বিক্রি করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাই করে দিতে পারে ফেস্টিভাল।
গতবছর অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম (অ্যাক্ট) নেপালে রডোডেনড্রন ফেস্টিভাল আয়োজন করেছিল। অ্যাক্টের কনভেনার রাজ বসু বলছেন, ‘নেপালের ফেস্টিভালে খুব ভালো সাড়া পেয়েছিলাম। চলতি বছর পাহাড়ের আবহাওয়া বেশ খামখেয়ালি। তাই ফেস্টিভাল হবে কি না এখনও ঠিক করা হয়নি।’ তবে সব ঠিক থাকলে ফেস্টিভাল যে হবে, সে ব্যাপারে আশাবাদী রাজ।