বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: হাতে আর মাত্র একদিন। রবিবার ঘটা করে দেশজুড়ে পালিত হবে সাধারণতন্ত্র দিবস। একইদিনে ফুলবাড়ি মোড়া থাকে আশ্চর্য নিস্তব্ধতায়। শুধু সাধারণতন্ত্র দিবস নয়, স্বাধীনতা দিবসে একই চিত্র দেখা যায় ওই গ্রামে।
উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপুকুর থানার বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে ফুলবাড়ি। গ্রামে শ’দেড়েক পরিবারের বাস। সম্প্রতি এখানে বিএসএফকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। জওয়ানের গুলিতে মৃত্যু হয় এক পাচারকারীর। সীমান্তে একাধিক ঘটনায় বিএসএফের কড়াকড়ি আগের থেকে অনেক বেড়েছে। অজানা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে গোটা গ্রাম। স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপ, ২৬ জানুয়ারি বা ১৫ অগাস্ট তারা আনন্দের আয়োজন থেকে ‘শতযোজন’ দূরে থাকেন। স্বাধীনতার স্বাদ তারা আজও পাননি। পঞ্চায়েত প্রকল্পের সব সুবিধা মেলে না। পোলিও কর্মসূচির বাইরে থাকে ফুলবাড়ি।
মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের মাধ্যম বলতে সীমান্তের ৪২ নম্বর গেট। তাও ফুলবাড়ি থেকে সেখানে যেতে হলে সঙ্গে রাখতে হয় পরিচয়পত্র। তা দেখাতে হবে সীমান্ত রক্ষীবাহিনীকে। গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধ্যা হলেই এলাকায় জারি হয় অঘোষিত কার্ফিউ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, উত্তর দিনাজপুরের ২৮৭ কিলোমিটার জুড়ে বাংলাদেশ সীমান্ত। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সময় ওপারে থেকে যায় ভারতের কয়েকটি গ্রাম, কৃষি জমি। সেইসময় কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের এপারে নিয়ে আসা হলেও গোয়ালপোখরের ওই গ্রাম বেড়ার ওপারে থেকে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, একদিকে দুষ্কৃতীদের ভয়, অন্যদিকে জওয়ানদের ভয়। তাঁরা মাঝেমধ্যে সন্দেহের বশে তল্লাশি চালান। এই বন্দিজীবন থেকে মুক্তি চাই। ফিরতে চাই বেড়ার ওপারে। আফসোসের সঙ্গে আরেক বাসিন্দা রেজাউল বলেন, ‘আমাদের কথা কেউ ভাবে না। ১৫ অগাস্ট হোক বা ২৬ জানুয়ারি গ্রামে আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকে না।’
জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তথা গোয়ালপোখর জেলা পরিষদের সদস্য গোলাম রসুল বলেন, ‘ওই গ্রামের সমস্যার কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’ বিএসএফের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু কড়াকড়ি থাকলেও গ্রামবাসীদের হয়রানি করা হয় না। বিপদে জওয়ানরাই গ্রামের পাশে থাকেন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, গ্রামটিকে কাঁটাতারের এপারে নিয়ে আসতে উদ্যোগ করা হবে।