সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: বকেয়া মহার্ঘভাতা নিয়ে নিষ্পত্তি হল না মঙ্গলেও। এদিন রাজ্যের হয়ে বর্ষীয়ান আইনজীবী কপিল সিব্বলের সওয়ালেই সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শেষ হয়ে গেল। বুধবার মামলাকারীদের বক্তব্য শুনবে বিচারপতি সঞ্জয় করোল ও বিচারপতি পিকে মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ। মঙ্গলবার শুনানি শুরু হওয়ার সময়েই বিচারপতিরা দু’পক্ষের কাছে জানতে চান, তাঁরা বকেয়া ডিএ নিয়ে কী ভাবছে? ডিএ কি মৌলিক অধিকার? তার জবাবে মামলাকারী কর্মচারী সংগঠনও মেনে নিয়েছে যে মৌলিক অধিকার নয়। তবে কেন্দ্রের হারে মহার্ঘভাতার দাবি থেকে তাঁরা সরছেন না।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার। তা নিয়ে আইন আদালতও কম হয়নি। কলকাতা হাই কোর্টের পর এবার সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা চলছে। এর আগে ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু আরও বেশি সময় চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে রাজ্য সরকার। সেই মামলার শুনানি ছিল সোমবার। তাতে নিষ্পত্তি না হওয়ায় মঙ্গলবার ফের মামলার সওয়াল-জবাব হয়। তাতে রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী কপিল সিব্বল। আগেও তিনি রাজ্যের আর্থিক সংকটের যুক্তি দেখিয়ে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া সম্ভব নয় বলে জোরদার সওয়াল করেছিলেন। এদিনও একই যুক্তি শোনা গেল তাঁর বক্তব্যে।
তবে এবার এক কদম এগিয়ে সিব্বলের বক্তব্য, ”বাজেটে বাড়তি মহার্ঘভাতার জন্য বরাদ্দ নেই। এই বিপুল অঙ্কের ডিএ মেটাতে হলে তো রাজ্যকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিতে হবে। তার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন দরকার। সেই প্রক্রিয়া দীর্ঘ। তারউপর ধার নিলে শোধ করার মতো আর্থিক পরিস্থিতি রাজ্যের রয়েছে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। রাজ্য সরকার আদৌ এতে রাজি হবে কি না, তাও ঠিক নেই। আর কেন্দ্রের নির্ধারিত আর্থিক কাঠামো মেনে চলতে কোনও রাজ্যকে কেউ চাপ দিতে পারে না।” সিব্বলের আরও বক্তব্য, ”কোভিডের সময় রাজ্যবাসীর পাশে দাঁড়াতে বিপুল অর্থ খরচ হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা দিচ্ছে না। সেই অর্থও রাজ্যের কোষাগার থেকে দিতে হচ্ছে। ফলে অর্থের সংকট আছে। কীভাবে এত বিপুল টাকার ডিএ-র জন্য খরচ করবে রাজ্য সরকার?”
বিচারপতিদের উদ্দেশে সিব্বল এও বলেন, ”আপনাদের রায়ের প্রভাব গোটা দেশে পড়বে।” তাতে বিচারপতিরা জানান, গোটা দেশে নয়, যে ১৩ রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয় না, তাদের উপরই প্রভাব পড়বে। রাজ্যের সওয়ালের পর এদিনের মতো শুনানি শেষ হয়ে যায়। বুধবার ফের শুনানি। কবে এর নিষ্পত্তি হবে? সেদিকে তাকিয়ে এখন বসে ডিএ-র ‘দাবিদার’ রাজ্য সরকারি কর্মীরা।