Panchanan Barma | ভারতরত্ন দেওয়া হোক রায় সাহেবকে 

Panchanan Barma | ভারতরত্ন দেওয়া হোক রায় সাহেবকে 

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


শুভঙ্কর চক্রবর্তী

বৃহত্তর বাংলায় ‘ঠাকুর’ বলতে আরাধ্য দেবতা বা ঈশ্বরকে বোঝায়। পঞ্চানন বর্মা (Panchanan Barma) তাঁর কর্মগুণে শুধু রাজবংশী সমাজ নয় অবিভক্ত বঙ্গের সর্বস্তরের মানুষের কাছে ‘ঠাকুর’ হয়ে উঠেছিলেন। সীমান্ত ঘেরা কোচবিহার জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম খলিসামারির পঞ্চানন সরকার কালের গণ্ডি অতিক্রম করে পরিচিত হয়েছেন রায় সাহেব ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা হিসাবে। সমাজ বিজ্ঞানীরা তাঁকে মনীষী রূপে আখ্যায়িত করেছেন। পরিচয়ের এই বিবর্তনই প্রমাণ করছে তাঁর জীবন-কর্ম-সাধনার প্রাসঙ্গিকতা। পঞ্চানন থেমে থাকেননি। সব বাধা অতিক্রম করে ভেঙে ভেঙে নিজেকে তৈরি করেছেন। তাইতো তিনি বলতে পেরেছিলেন, ‘তোর আশা সগায় করুক/ তুই যেন কারো আশা না করিস।’

ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান, দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে রাজবংশী সমাজ। অভিবাসী নয়, চারটি দেশের স্থায়ী অধিবাসী এমন জনগোষ্ঠী ভারতীয় উপমহাদেশে আছে কি না তা নিয়ে চর্চার বিষয়। ইতিহাসের বিচারে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। ঐতিহাসিকদের মতে, এই জনগোষ্ঠীর শাসকরা এই ভূখণ্ডের বিস্তৃত অংশ বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এই গোষ্ঠীর এখনও নিজস্ব কোনও ভূমি বা হোমল্যান্ড নেই। পঞ্চানন ছিলেন এই স্বভূমিহীন জনগোষ্ঠীর আওয়াজ।

তৎকালীন সামাজিক গোঁড়ামি ছিল পাথরের দুর্গের চেয়েও মজবুত। অকুতোভয় পঞ্চানন সেই গোঁড়ামির দুর্গে নিরন্তর আঘাত হেনে দুর্বল করে তুলেছিলেন। নারী স্বাধীনতা, কৃষি সংস্কার, রাজবংশী তরুণদের সৈনিকবৃত্তির পেশায় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা, শিক্ষা সংস্কার ইত্যাদি বহুবিধ পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারে বিপ্লব এনেছিলেন পঞ্চানন। রাজবংশীদের ক্ষত্রিয় পরিচয়কে সুপ্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে একটি জাতিকে কুলীন সমাজের উপেক্ষা থেকে স্বতন্ত্র করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সাহসের সঙ্গে তৎকালীন সমাজকে উপেক্ষা করে ধর্ষিতাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন পঞ্চানন। জেলায় জেলায় নারী আশ্রম বা নারীকল্যাণ সমিতি স্থাপন করার কথা বলেছিলেন। অত্যাচারিত নারীদের স্বনির্ভর হওয়ার পথ বাতলে দিয়েছিলেন। তিনি ‘নারী রক্ষা সেবক দল’ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। ক্ষত্রিয় সমিতিতে ‘নারী রক্ষা বিভাগ’ও খুলেছিলেন। আর জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য রচনা করেছিলেন ঐতিহাসিক ‘ডাংধরি মাও’ গান বা কবিতা।

উত্তরবঙ্গের ভিতরে আর একটি স্বতন্ত্র উত্তরবঙ্গ আছে অবিভক্ত বঙ্গের সেই উত্তরবঙ্গকে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন রায় সাহেব। সাম্প্রতিক সময়ে শাসক, বিরোধীদের কাছে মনীষী পঞ্চানন হয়ে উঠেছেন ভোট রাজনীতির উপাদান। সভা, সমিতি করে, মূর্তি গড়ে কে কত বড় পঞ্চানন অনুরাগী তা প্রমাণ করার প্রতিযোগিতা চলছে। তবে পঞ্চাননের সংস্কার, তাঁর ভাবনা বাস্তবায়িত করার দায় কেউ কাঁধে তুলে নিচ্ছেন না। কয়েক দশকেও রায় সাহেবকে নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যায়তনিক চর্চা আশানুরূপভাবে এগোয়নি। পঞ্চানন ও তাঁর কালকে নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা বলতে যা বোঝায় তা আঙুলে গোনা যাবে।

আজ একটি জাতিকে আলোর দিশা দেখানো এক স্বপ্নদ্রষ্টার জন্মদিন। সমাজ সংস্কার তো বটেই শুধুমাত্র নারী স্বাধীনতা আন্দোলন বা কর্মকাণ্ডের জন্যই মনীষী পঞ্চানন বর্মাকে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া উচিত। অনেক দেরি হয়েছে। আর দেরি না করে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হোক বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমাজসংস্কারককে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *