Padma Shri | রাজবংশীতে মহাভারত লিখতে চান পদ্মশ্রীর জন্য মনোনীত নগেন্দ্রনাথ

Padma Shri | রাজবংশীতে মহাভারত লিখতে চান পদ্মশ্রীর জন্য মনোনীত নগেন্দ্রনাথ

শিক্ষা
Spread the love


সানি সরকার ও সাগর বাগচী, শিবমন্দির: সন্ধ্যায় বিধায়ক আনন্দময় বর্মন যখন ফোন করে তাঁকে প্রাপ্তির খবরটা দিয়েছিলেন, তখন সত্যি বলতে বিশ্বাসই হয়নি। তবুও মনের মধ্যে কোথায় যেন খানিক উৎকণ্ঠা। অতএব লাঠিতে ভর দিয়ে বাড়ির উঠোনে থাকা মন্দিরে জোড়া কালী প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে অস্ফুটে জানতে চাওয়া, ‘এ কি সত্যি? সাধনার ফল কি সত্যিই পেতে চলেছি? নাকি নতুন কোনও স্বপ্ন দেখছি?’ কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ফোন বেজে ওঠে। ধরতেই ও’প্রান্ত বলে ওঠে, ‘প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলছি। কাজের স্বীকৃতিতে পদ্মশ্রীর জন্য আপনি মনোনীত হয়েছেন।’ পাথরঘাটার ভুবনজোত প্রাথমিক স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক নগেন্দ্রনাথ রায় (Nagendranath Roy) এরপর আর ফোনটা নিজের হাতে ধরে রাখতে পারেননি। পারবেনই বা কী করে! ঘটনার আকস্মিকতায় দুই হাত তখন সমানে কাঁপছে। ছেলে নরেন্দ্র সেই ফোনটি ধরার পাশাপাশি বাবাকে আঁকড়ে ধরে পরিস্থিতি সামাল দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুষ্পস্তবক নিয়ে শিবমন্দিরের চৈতন্যপুর এলাকায় টিনের চালের বাড়িতে আনন্দময় পৌঁছে যান।

এলাকায় যে এমন গুণী মানুষের বাস তা বাসিন্দাদের অনেকেরই জানা নেই। রাত ১০টার সময় যখন তাঁর বাড়িতে পা রাখা, তখনও এবছর পদ্মশ্রীর (Padma Shri) জন্য মনোনীত ‘রাজবংশী সমাজের বাল্মীকি’ নগেন্দ্রনাথ যেন স্বপ্নের ঘোরে। কেন্দ্রীয় সরকার পদ্মশ্রীর জন্য তাঁকে মনোনীত করেছে বলে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। যার জন্য বারবার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘হ্যাঁ রে, ঠিকমতো শুনেছিস তো। বিষয়টা কি সত্যি?’ কোথাও ইটের গাঁথনি, কোথাও আবার দরমার বেড়া। মাথার ওপর টিনের চাল। এমন বাড়িতে দিন-রাত কাটিয়ে কলম পিষলেও পদ্মশ্রীর মতো পুরস্কার পাওয়া যায়, নগেন্দ্রনাথের ভাবনায় তা কোনওদিনও ছিল না। এতদিন সরকারি পুরস্কার বলতে ২০১১ সালের শিক্ষারত্ন পুরস্কার। বঙ্গরত্ন বা বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার যেখানে মেলেনি, সেখানে সটান পদ্মশ্রী, বিশ্বাস হবেই বা কী করে!

সরকারি সূত্রে খবর, রাজবংশী ভাষায় রামায়ণ অনুবাদ করাতেই তাঁর এই প্রাপ্তি। বাংলা নিয়ে পড়াশোনা। এজাতীয় অনুবাদ নগেন্দ্রনাথ অবশ্য সংস্কৃত থেকে সরাসরি রাজবংশীতেই করেন। তাঁর দাবি অনুযায়ী, রাজবংশীতে রামায়ণ অনুবাদে তিনিই প্রথম। তবে সাত খণ্ডের বইটি এখনও পাঠকের হাতেই যায়নি। আগামী পয়লা বৈশাখ রাজবংশী ভাষার রামায়ণটি প্রকাশ করার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই করে রেখেছিলেন। তবে তার আগেই রাজবংশী ভাষায় চণ্ডী, গীতা, চণ্ডালিকার লেখক বহু কাঙ্ক্ষিত সেই স্বীকৃতি পেলেন। বললেন, ‘শুনছি রামায়ণের জন্য এই সম্মান। কিন্তু কীসের জন্য এমন স্বীকৃতি ঠিক বুঝতে পারছি না।’ তবে এই সম্মান ১০ বছর আগে স্ট্রোকের শিকার হওয়া ৭৩ বছরের নগেন্দ্রনাথের উৎসাহ যেন দ্বিগুণ করে তুলেছে। তরতাজা তরুণের মতোই বললেন, ‘একটা সময় সাধ হলেও ভীতির কারণে মহাভারত লেখার কাজ শুরু করতে পারিনি। কিন্তু এখন মনে হয় সেটা লিখতে পারব।’ জলপাইগুড়ির বোদাপাড়ায় জন্ম নেওয়া নগেন্দ্রনাথ একটা সময় দু-চোখ মেলে করতোয়ার প্রবাহ দেখেছেন। এই করতোয়ার পথ ধরেই পঞ্চপাণ্ডব  বিরাটনগর গিয়েছিলেন। স্মৃতির সরণিতে হেঁটে বললেন, ‘এবার মহাভারতটা লিখতেই হবে।’

এখন শিবমন্দিরের চৈতন্যপুর এলাকায় থাকলেও একটা সময় পাথরঘাটার শচীন্দ্রনাথ রায়ের আশ্রিত ছিলেন। অভাবের তাড়নায় তাঁকে নিয়ে তাঁর মা ভাগ্যেশ্বরীদেবী জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি চলে এসেছিলেন। শচীন্দ্রনাথের মহানুভবতায় নগেন্দ্রনাথের  ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। একটা সময় পড়াশোনার ইতি ঘটবে বলে যে ছেলেটা মন খারাপ করে বসে থাকত, শচীন্দ্রনাথ সেই নগেন্দ্রনাথকে ভুবনজোত প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করে দেন। পরবর্তীতে মাটিগাড়ার হরসুন্দর উচ্চবিদ্যালয় এবং শিলিগুড়ি কলেজ। শিলিগুড়ি কলেজে বাংলা নিয়ে পার্ট-ওয়ান পরীক্ষা দেওয়ার পরই যে স্কুলে প্রাথমিকে পড়তেন, সেই স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি। চাকরি করার ফাঁকে নগেন্দ্রনাথের যাবতীয় লেখালেখি।

মা না থাকলে এমন উত্তরণ ঘটত না; স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বৌ এবং পাঁচ মাসের নাতনির উপস্থিতিতে পদ্মশ্রী নগেন্দ্রনাথ জানাতে ভোলেননি। তাই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘোরানো মা ভাগ্যেশ্বরীদেবীকেই জীবনের সেরা প্রাপ্তিকে উৎসর্গ করলেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *