Oral Most cancers and Radiation | ওরাল ক্যানসার এবং রেডিয়েশন 

Oral Most cancers and Radiation | ওরাল ক্যানসার এবং রেডিয়েশন 

শিক্ষা
Spread the love


উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ক্যানসার এমন এক রোগ যা প্রাথমিক পর্যায়ে নীরবেই বিকাশ লাভ করে। বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের মধ্যে মুখের ক্যানসার বা ওরাল ক্যানসার একটি। প্রধানত তামাকজাত নেশার কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। অন্যদিকে ক্যানসার যেমনই হোক না কেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি ক্যানসারের চিকিৎসা তুলনামূলক সহজ করেছে। যার মধ্যে অন্যতম রেডিয়েশন থেরাপি। মুখের ক্যানসার ও রেডিয়েশন থেরাপি (Oral Most cancers and Radiation) নিয়ে আলোকপাত করলেন দুই বিশেষজ্ঞ।

সুপারিপানমশলা ছাড়ুন, মুখ পরিষ্কার রাখুন  (ডাঃ গৌরব দাস, ওরাল অ্যান্ড মেক্সিলোফিশিয়াল সার্জন)

ছেলেদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যানসার এবং মেয়েদের মধ্যে পঞ্চম সাধারণ ক্যানসার হল মুখের ক্যানসার। সারা পৃথিবীর মধ্যে মুখের ক্যানসার সবচেয়ে বেশি ভারতে হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে মোট ক্যানসারের ২০ শতাংশ হল মুখের ক্যানসার। মুখের ক্যানসারের প্রায় ৪০ শতাংশ হয় তামাক বা তামাক জাতীয় পদার্থের জন্য।

তামাক জাতীয় নেশার দ্রব্যকে আমরা সাধারণ দুটি ভাগে ভাগ করি – ধোঁয়া যুক্ত এবং ধোঁয়াহীন। ধোঁয়াযুক্ত নেশার দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে বিড়ি, সিগারেট, চুরুর পাইপ প্রভৃতি। অন্যদিকে, ধোঁয়াহীন নেশার মধ্যে পড়ে পান, খইনি, গুটখা, গুড়াকু প্রভৃতি।

ধোঁয়াযুক্ত তামাক জাতীয় নেশা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ। ধোয়াহীন তামাক জাতীয় পদার্থের নেশা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুখের ক্যানসারের কারণ। তাছাড়া মদের সঙ্গে তামাক জাতীয় পদার্থ খাওয়া ক্ষতিকর, এতে মুখের ক্যানসার দ্রুত বাড়তে পারে।

এছাড়া কারও যদি ছুঁচোলো দাঁত থাকে এবং সেটা যদি প্রতিনিয়ত মুখের কোনও জায়গায় আঘাত করতে থাকে তাহলেও মুখে ক্যানসার হতে পারে। সেইসঙ্গে এইচপিভি ভাইরাস (HPV) এবং জেনেটিক্সও মুখের ক্যানসারের একটা কারণ। শুনলে অবাক লাগবে, তামাক সম্পর্কিত রোগের কারণে ভারতে প্রতিদিন ২৫০০ জনের মৃত্যু হয়।

লক্ষণ

  • অস্বাভাবিক মাংস বৃদ্ধি, যা গালের যে কোনও অংশে, তালুতে, জিভে ও মাড়িতে হতে পারে
  • ২১ দিনের বেশি মুখে ঘা থাকলে
  • গলার গ্রন্থি ফুলে গেলে
  • মুখের ভেতরে বা বাইরে ফুলে গেলে
  • জিভ নাড়াতে অসুবিধা হলে

 প্রি ম্যালিগন্যান্ট কন্ডিশন

এটি ক্যানসার নয়, কিন্তু ক্যানসারের আগে স্টেজ। এক্ষেত্রে মুখে সাদা দাগ হতে পারে, মুখে ঘা হতে পারে কিংবা মুখ হাঁ করা ক্রমশ কমতে পারে। প্রি ম্যালিগ‌ন্যান্ট কন্ডিশনের মধ্যে ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস এবং ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রোসিস অন্যতম।

পূর্ব ভারতে ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রোসিেসর আধিক্য তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এটি সাধারণত চুন, সুপারি এবং পানমশলা খাওয়ার জন্য হয়ে থাকে। সুপারি থেকে অ্যারিকোলিন নির্গত হয়, যা মুখের ইলাস্টিসিটি কম করে দেয়। ফলে মুখ খোলার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসে। এতে পরবর্তীকালে মুখের ক্যানসারে পরিবর্তন হওয়ার ঝঁুকি থাকে।

রোগনির্ণয়

কারও মুখে ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমে তাকে বায়োপসি করতে হবে। তারপর রিপোর্ট দেখে জানা যাবে এটি ক্যানসার কি না। যদি ক্যানসার হয় তাহলে তাকে সিটিস্ক্যান এবং কিছু ক্ষেত্রে এমআরআই করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে বুকের সিটি স্ক্যান বা পেটস স্ক্যান করা করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসা

প্রধান চিকিৎসা সার্জারি, তারপর রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি। কী চিকিৎসা হবে সেটা ঠিক করা হয় ক্যানসার কোন স্টেজে রয়েছে এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর।

প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু অস্ত্রোপচার করা হয় বা অস্ত্রোপচারের সঙ্গে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। স্টেজ থ্রি বা 4A হলে সার্জারি এবং রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়, ক্ষেত্র বিশেষে কেমোথেরাপিও দেওয়া হয়ে থাকে। অ্যাডভান্স স্টেজে রোগটি হাড়, কিডনি, লিভার ও ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই চূড়ান্ত পর্যায়ে শুধুমাত্র রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে। মুখের ক্যানসারে মুখের বা চোয়ালের অনেকটা অংশ বাদ দেওয়া হয়। সেটিকে পুনর্গঠন করতে গিয়ে বুকের বা হাতের মাংস নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। অনেক সময় পায়ের হাড়ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

যা মনে রাখবেন

যত তাড়াতাড়ি রোগনির্ণয় হবে সেটা রোগীর জন্য খুব ভালো। কারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে যদি রোগনির্ণয় হয়ে থাকে তাহলে ৮২ শতাংশ ঠিক হয়ে যেতে পারে। রোগ নির্ণয়ের পর সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা করানো উচিত। কারণ যত বড় ক্ষত তত বড় সার্জারি, তত বড় অংশ বাদ, তত বড় পুনর্গঠন এবং তত বেশিদিন হাসপাতােল থাকতে হবে।

সুতরাং, এত ঝক্কির মধ্যে না গিয়ে তামাক জাতীয় যে কোনও নেশা থেকে দূরে থাকুন, মুখ পরিষ্কার রাখুন।

সুস্থ কোষের ক্ষতি না করে চিকিৎসা  (ডাঃ সহেলি সাহা, রেডিয়েশন অঙ্কোলজি)

আধুনিক চিকিৎসার একাধিক উপাদানের মধ্যে রেডিয়েশন থেরাপি অন্যতম। এই পদ্ধতি শক্তির কিরণ ব্যবহার করে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তবে রেডিয়েশন থেরাপি নিয়ে অনেক মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণা এবং ভয় রয়েছে। এই লেখার উদ্দেশ্য, রেডিয়েশন থেরাপির কাজ এবং ক্যানসার মোকাবিলায় এর ভূমিকা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা।

রেডিয়েশন থেরাপি কীভাবে কাজ করে

রেডিয়েশন থেরাপি এমনভাবে কাজ করে যাতে ক্যানসার কোষ ধ্বংস হয়, কিন্তু আশপাশের সুস্থ কোষগুলি তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত থাকে।

ক্যানসার কোষে আঘাত : ক্যানসার কোষ দ্রুত বিভাজিত হয় এবং বৃদ্ধি পায়। ডিএন হল কোষের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, যা কোষকে বেঁচে থাকা এবং বিভাজিত হতে সাহায্য করে। রেডিয়েশন কোষের ডিএনএ-তে আঘাত করে এবং বিভাজন প্রক্রিয়া অব্যাহত করে।

ক্যানসার কোষের মৃত্যু : ডিএনএ ধ্বংস হলে কোষ আর বিভাজিত হতে পারে না এবং ধীরে ধীরে মারা যায়।

সুস্থ কোষের সুরক্ষা : সুস্থ কোষগুলি রেডিয়েশনের প্রভাব থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে পারে।

রেডিয়েশন থেরাপির ধরন

রেডিয়েশন থেরাপির দুটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে-

এক্সটার্নাল বিম থেরাপি : এক্সটার্নাল মানে শরীরের বাইরে থেকে এবং বিম মানে শক্তির কিরণ। একটি মেশিন থেকে রেডিয়েশন শরীরের নির্দিষ্ট অংশে পাঠানো হয়। স্তন, ফুসফুস বা মস্তিষ্কের মতো ক্যানসারের চিকিৎসায় একটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

ব্র্যাকিথেরাপি : ব্র্যাকি শব্দের অর্থ কাছাকাছি। এই পদ্ধতিতে একটি রেডিয়েশন উৎস ক্যানসার কোষের কাছে বা শরীরের ভেতরে রাখা হয়। জরায়ু বা প্রস্টেট ক্যানসারের মতো চিকিৎসায় এটি খুব কার্যকর।

রেডিয়েশন থেরাপি কীভাবে পরিকল্পনা করা হয়

রেডিয়েশন থেরাপিতে সঠিক পরিকল্পনা অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি শুরু করার আগে একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা করা হয়, যাতে ক্যানসার কোষে সঠিকভাবে আঘাত করা যায় এবং সুস্থ কোষ সুরক্ষিত থাকে।

সিমুলেশন : চিকিত্সার প্রথম ধাপে রোগীর শরীরের নির্দিষ্ট অংশের সিটিস্ক্যান বা এমআরআই করা হয়। এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা ক্যানসার কোষের অবস্থান, আকার এবং আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি চিহ্নিত করেন।

চিহ্নিতকরণ : রোগীর শরীরে একটি ছোট চিহ্ন (ট্যাটু বা মার্কারি) দিয়ে সঠিক স্থানের নির্দেশ করা হয়, যাতে প্রতিদিন একই জায়গায় রেডিয়েশন দেওয়া যায়।

চিকিৎসার পরিকল্পনা : চিকিৎসক একটি পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনাকে বলা হয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান, যা প্রত্যেকটি রোগীর জন্য নির্দিষ্ট। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য, রেডিয়েশন ঠিক কত ডোজে, কতদিন ধরে, এবং কোন কোণ থেকে দেওয়া হবে তা ঠিক করা।

পরীক্ষামূলক সেশন : চিকিৎসা শুরু করার আগে একটি সেশন করা হয় যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, রেডিয়েশন ঠিক জায়গায় পৌঁছাচ্ছে। এই ধাপে সময় লাগে কারণ এটি রেডিয়েশন থেরাপির সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

রেডিয়েশন থেরাপির সুফল

ক্যানসার মুক্তি : রেডিয়েশন থেরাপি এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি যাতে অনেক ক্ষেত্রেই ক্যানসার সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়।

অঙ্গ সংরক্ষণ : রেডিয়েশন থেরাপি অনেক ক্ষেত্রে অঙ্গ সংরক্ষণে সাহায্য করে। যেমন, ল্যারিঞ্জিয়াল ক্যানসারে রেডিয়েশন থেরাপি গলার স্বর অক্ষত রাখতে সহায়ক।

কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : আধুনিক প্রযুক্তি রেডিয়েশন থেরাপিকে অত্যন্ত নির্ভুল করেছে, যাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা পুরোনো প্রযুক্তির তুলনায় অনেকটাই কমেছে। এটি শুধুমাত্র ক্যানসার কোষে আঘাত করে, ফলে সুস্থ কোেষর কম ক্ষতি হয়।

ব্যথাহীন এবং সহজ : চিকিৎসার সময় রোগী কিছুই অনুভব করেন না। প্রতিটি সেশন মাত্র ১০-১৫ মিনিটের।

বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যকর : রেডিয়েশন থেরাপি ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায় থেকে উন্নত পর্যায়ে পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করা যায়।

রেডিয়েশন থেরাপি যেভাবে প্যালিয়েটিভ চিকিৎসায় সহায়ক

প্যালিয়েটিভ  মানে এমন চিকিৎসা যা রোগীর উপসর্গ কমাতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে। অনেক সময় রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব না হলেও রেডিয়েশন থেরাপি ব্যথা কমানো, রক্তক্ষরণ বন্ধ করা এবং শ্বাসকষ্ট বা গিলে খাওয়ার অসুবিধা দূর করতে সহায়ক। এটি রোগীকে মানসিক শান্তি এনে দেয় এবং শেষ দিনগুলো সহনযোগ্য করে তোলে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *