উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ‘ভুয়ো’ সাধুদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে বিশেষ উদ্যোগ নিল উত্তরাখণ্ড সরকার। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘অপারেশন কালনেমি’ (Operation Kalnemi)। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি (Pushkar Singh Dhami) বলেন, ‘এই উদ্যোগের মাধ্যেমে ভুয়ো সাধুদের আটকাতে চান তাঁরা। যাতে সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার না হন। উত্তরাখণ্ড (Uttarakhand) দেবভূমি (দেবতাদের স্থান) নামে পরিচিত। কিন্তু আমরা কিছু মানুষকে সাধুর ছদ্মবেশে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে দেখেছি। আমরা কাউকে ধর্মকে কলুষিত করার অনুমতি দিতে পারি না।’
এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেন তিনি। তিনি লিখেছেন, দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে সনাতন ধর্মের নামে যারা গেরুয়া বস্ত্র পরে মানুষকে প্রতারণা করে এবং তাদের অনুভূতি নিয়ে খেলা করে, তাদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন কালনেমি’ শুরু করার জন্য অফিসারদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাজ্যে আমরা এমন অনেক ঘটনা দেখেছি যেখানে সমাজবিরোধীরা সাধু-সন্তদের পোশাক পরে মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের সঙ্গে প্রতারণা করে। এটি কেবল মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে না বরং সম্প্রীতি বিঘ্নিত করে এবং সনাতন ঐতিহ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। যারা দুষ্কর্মে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় আমরা ধর্মকে বিবেচনা করব না। আজকাল আমাদের সমাজে অনেক কালনেমি সক্রিয় রয়েছে। তারা অপরাধ করার জন্য ধর্মীয় পোশাক পরে… আমরা তাদের কখনই ছাড় দেব না’।
শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে কানওয়ার যাত্রা (Kanwar Yatra)। শেষ হবে ৯ অগাস্ট। কানওয়ার যাত্রার একদিন আগে ‘অপারেশন কালনেমি’ শুরু করা হয়েছে। এবিষয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, একদিন আগে ‘অপারেশন কালনেমি’ শুরু করার কারণ, গঙ্গা জল সংগ্রহের জন্য রাজ্যে বিপুল সংখ্যক ভক্ত উপস্থিত থাকবেন। তাঁরা যাতে কোনওভাবে বিভ্রান্ত বা প্রতারিত না হন, তাই তাঁদের সুরক্ষার্থে কানওয়ার যাত্রার একদিন আগে ‘অপারেশন কালনেমি’ শুরু করা হয়েছে।
কেন এমন নামকরণ?
এই অভিযানের নামকরণ করা হয়েছে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী থেকে, যেখানে ‘কালনেমি’ নামে এক রাক্ষসকে উল্লেখ করা হয়েছে। যিনি রামায়ণে ভগবান হনুমানকে বিভ্রান্ত করার জন্য নিজেকে ঋষির ছদ্মবেশে রেখেছিলেন। ব্যক্তিগত লাভের জন্য ধর্মীয় বিশ্বাসকে যারা কাজে লাগায়, এমন ব্যক্তিদের মুখোশ খুলে দিতে এবং শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকারের এই পদক্ষেপ।
অপারেশন কালনেমির মূল দিক:
* লক্ষ্য: এই অভিযানের প্রাথমিক লক্ষ্য হল ‘ভুয়ো সাধু’ বা প্রতারক যারা ধর্মীয় অনুভূতি এবং সনাতন ধর্মের পবিত্রতার অপব্যবহার করে জনগণ বিশেষ করে মহিলাদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের চিহ্নিত করা।
* উদ্দেশ্য: এই অভিযানের লক্ষ্য জনসাধারণের ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষা করা, সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সনাতন সংস্কৃতির মর্যাদা বজায় রাখা, বিশেষ করে ‘দেবভূমি’ উত্তরাখণ্ডে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।
* প্রয়োগ: উত্তরাখণ্ড পুলিশকে এই প্রতারকদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ অভিযান পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে কাউকে প্রতারণা করার অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারের এই পদক্ষেপকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। এটি একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে, যারা বিশ্বাসের নামে ভণ্ডামি ছড়ায় তাদের কোনওভাবে ছাড় দেওয়া হবে না।