ঘোকসাডাঙ্গা: হাস-মুরগির ডিম সংগ্রহ করে তা বিক্রি করেই সংসার চালান কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা-২ ব্লকের (Mathabhanga) লতাপাতার বাসিন্দা নিশিকান্ত দাস। সত্তরোর্ধ্ব নিশিকান্তকে কেউ চিনতেন না তেমনভাবে। তবে তাঁর এনআরসি’র নোটিশ (NRC Discover) পাওয়ার খবর উত্তরবঙ্গ সংবাদে শনিবার প্রকাশিত হতেই রীতিমতো ভাইরাল তিনি।
শনিবার সকাল থেকেই তাঁর বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন নেতারা। এদিন সকালে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন, তৃণমূল নেতা সাবলু বর্মন, যুবনেতা কমলেশ অধিকারী সহ তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁর বাড়িতে পৌঁছান। সেখানে পৌঁছে নিশিকান্তর সঙ্গে কথা বলে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। শোনা যাচ্ছে, তাঁকে নাকি নিজেদের দলে টানতে মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই এনআরসি’র নোটিশ পাওয়া কোচবিহার জেলার দিনহাটার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে গত ২১ জুলাই ধর্মতলায় সমাবেশের মঞ্চে হাজির করে তৃণমূল নেতৃত্ব। আর সেই মঞ্চ থেকেই তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি হেনস্তার প্রতিবাদে আন্দোলনের বার্তা দেন। আর তা নিয়েই রবিবার ব্লকে ব্লকে এমনকি অসম-বাংলা সীমান্তের বক্সিরহাটে এরই প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে তৃণমূলের। আর সেই কর্মসূচিতে নিশিকান্তকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে তৃণমূল।
এদিকে, সকালে তৃণমূল নেতৃত্ব চলে যাওয়ার পর বিকালে বিজেপি নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য গুরুপ্রসাদ বর্মনকে সঙ্গে নিয়ে মাথাভাঙ্গার বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা সুশীল বর্মন সহ বিজেপি নেতৃত্ব নিশিকান্তের বাড়িতে যান। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন পাশে আছেন বলে দাবি করেন তাঁরাও।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, ‘বাংলা ভাষা বলাটাই কি দোষ? বিজেপি শাসিত অসম সহ বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। এর আগে উত্তম ব্রজবাসীর পর এবার নিশিকান্ত দাসের কাছে এনআরসি’র নোটিশ পাঠিয়েছে অসম সরকার। আসলে এনআরসি নিয়ে বিজেপি একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোট পাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে।’
অন্যদিকে, বিজেপি নেতা সুশীল বর্মন এ ব্যাপারে বলেন, ‘নিশিকান্ত দাস এখানকারই ভোটার। তাঁর কাছে প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র আছে। ফরেনার ট্রাইবিউনাল থেকে পাঠানো নোটিশটা দেখেছি। এতদিন পর পুলিশ মারফত আসা নোটিশটি আসল কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘সিএএ চালু আছে। তাঁর কোনও ভয়ের ব্যাপার নেই।’
তবে রবিবার তৃণমূলের কর্মসূচিতে নিশিকান্ত যাবেন কি না তা জানতে চাইলে তিনি জবাবে বলেন, ‘নেতারা বলেছে যেতে হবে। আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক নই। সংসার সামলাতে দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হয়।’
সব মিলিয়ে এখন রাজনৈতিক নেতাদের মূল আকর্ষণ নিশিকান্ত দাস। আগামী বছর রয়েছে রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তাই বাঙালিদের হেনস্তা, এনআরসি সহ নানা অভিযোগকে হাতিয়ার করেই ময়দানে নেমে পড়েছে শাসক দল। উত্তম ব্রজবাসীর পর এবার মাথাভাঙ্গার নিশিকান্তকে নিয়েই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল।