রামপ্রসাদ মোদক, রাজগঞ্জ: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক লোকসংস্কৃতি। পাশাপাশি বৈদ্যুতিন যন্ত্রের প্রভাবও রয়েছে। আর সেই প্রভাব পড়েছে উত্তরের অনেক লোকসংস্কৃতির ওপর। অনেক লোকসংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে।
এরকমই উত্তরবঙ্গের একটি লোকসংস্কৃতি ‘বাঁশ খেলা’। একসময় উত্তরবঙ্গের (North Bengal) হাটে, বাজারে, মহল্লায় দাপিয়ে বেড়ানো এই লোকসংস্কৃতি এখন অবলুপ্তির দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। বাঁশ খেলা রাজবংশী সমাজ তথা উত্তরবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি। সাধারণত কালী ঠাকুরকে বাঁশ খেলার দেবতা হিসাবে মানা হয়। কোনও ব্যক্তি তাঁর অভীষ্ট কিছু পাওয়ার জন্য মানত করে থাকেন। তা পেয়ে গেলে, তিনি বাঁশ খেলার আয়োজন করেন।
গ্রামের বাসিন্দারা সাধারণত সন্তান লাভের আশায় মানত করে থাকে। বাঁশ খেলায় একজন মারেয়া বা পূজারি থাকেন। তাঁর হাতে থাকে ঘট। ঘটে দুধজল ও চাল থাকে। পাশাপাশি কাপড় পরানো সিঁদুরের টিপ দেওয়া একটি দণ্ড নেওয়া হয়। যে বাড়িতে যাওয়া হয়, ওই পরিবারের লোকদের ওপর চালজল ছেটানো হয়। পাঁচজন পুরুষ নর্তক ও নর্তকী সেঁজে নাচ-গান করে। পাঁচটি বাঁশ রঙিন শাড়ি বা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে, সুন্দরভাবে সাজানো হয়। নর্তক-নর্তকীদের সঙ্গে পাঁচজন পুরুষও বাঁশগুলি নিয়ে নাচ করেন। একারণেই গ্রামে এর নাম বাঁশ খেলা।
এই খেলায় যে গানগুলি ব্যবহৃত হয়, তা মানুষের মনের কথা ও সমসাময়িক সময়ের কথা তুলে ধরে। যেমন, ‘এলাকার বুড়িলার দেখো আক্কেল গিলা’, ‘খলখলায় হাঁসেছে দেখা যাছে কলকাতা’।
উত্তরের সংস্কৃতিকে ভুলতে বসায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন উত্তরের লেখক এবং পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত নগেন্দ্রনাথ রায়। তিনি বললেন, ‘সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লোকসংস্কৃতিকে আধুনিক করে তোলা প্রয়োজন রয়েছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলি যেন বজায় থাকে।’ লোকসংস্কৃতিকে ধরে রাখার আবেদন জানিয়েছেন রাজবংশী ক্ষত্রিয় সমিতির কেন্দ্রীয় সম্পাদক ধর্তিমোহন রায়।
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি চর্চা থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে একসময়ের জনপ্রিয় বাঁশ খেলা। একসময় গ্রামে এর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। বিভিন্ন মহল্লা থেকে গ্রামের বাজার হাট দাপিয়ে বেড়াত বাঁশ খেলা। এখন বাঁশ খেলার জনপ্রিয়তা থাকলেও শিল্পীর অভাবে বাঁশ খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না অনেক স্থানে। গ্রামের হাটে বাঁশ খেলা দেখতে ও তার গান শুনতে মানুষের ভিড় জমলেও শিল্পীর অভাবেই বন্ধের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে বাঁশ খেলা।