NBU | বাংলাদেশি ছাত্রকে নিয়ে বাড়ছে রহস্য

NBU | বাংলাদেশি ছাত্রকে নিয়ে বাড়ছে রহস্য

ব্লগ/BLOG
Spread the love


শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: ‘বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছি’- সশরীরে হাজিরা এড়িয়ে এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ই–মেল পাঠিয়ে বেপাত্তা হলেন বিতর্কিত বাংলাদেশি ছাত্র শান ভৌমিক (Bangladeshi nationwide)। বুধবার সকাল ৭টায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (NBU) জয়েন্ট রেজিস্ট্রার স্বপনকুমার রক্ষিতের কাছে শানের ই–মেল আসে। সেখানেই তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার কথা লিখেছেন। ছাত্র ভিসায় ভারতে এসে আইন ভেঙে শিক্ষকতা করানোর ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে যায়।

মঙ্গলবার পাসপোর্ট এবং ভিসা নিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শানকে তাঁর দপ্তরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন স্বপন। কেন হাজিরা এড়ালেন শান সেই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। তাহলে কি তাঁর পাসপোর্ট বা ভিসা সংক্রান্ত নথিতে কোনও গোলমাল আছে? আর সেই গোলমাল ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়েই কি হাজিরা এড়ালেন তিনি?  উঠেছে সেই প্রশ্নও।

সত্যিই শান বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছেন, নাকি ভারতেই আত্মগোপন করে আছেন তা স্পষ্ট নয়। বুধবার সকাল থেকেই তাঁর মোবাইল সুইচ অফ বলছে। মেসেজ করলেও সাড়া মেলেনি। জয়েন্ট রেজিস্ট্রারের কথায়, ‘যে ই–মেল পেয়েছি তাতে স্পষ্ট করে বলা নেই ওই ছাত্রটি কবে বাংলাদেশ গিয়েছেন। নিরাপত্তার কারণে তিনি হাজিরা এড়িয়েছেন বলেই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। যদি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়ে থাকে তাহলে আইনের দ্বারস্থ না হয়ে তিনি কেন দেশে ফিরে যাওয়ার কথা লিখলেন তা-ও বুঝতে পারছি না।’ স্বপনের সংযোজন, ‘আমরা ছাত্রটিকে পালটা মেল পাঠিয়েছি। জানতে চেয়েছি তিনি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসবেন কি না বা পরীক্ষা দেবেন কি না। যদি ফিরে আসেন তাহলে অবশ্যই তাঁকে পাসপোর্ট এবং ভিসা নিয়ে হাজির হতে হবে সেকথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত শানের ভারতীয় সিম কার্ড চালু ছিল। শান তলে তলে অন্য কোনও পরিকল্পনা করছেন কি না তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সূত্রের খবর, শিলিগুড়ির লেকটাউন এলাকায় শানের একাধিক আত্মীয়ের বাড়ি আছে। মাস কমিউনিকেশন বিভাগে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে শহরের তিনবাত্তি বা জলপাই মোড় এলাকায় শানের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটও নাকি রয়েছে। ওই বাংলাদেশি তরুণকে নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে ক্যাম্পাসে। তবে এতসবের পরেও এখনও পর্যন্ত বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রশাসন বা পুলিশকে জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উচ্চশিক্ষা দপ্তরেও চিঠি দিয়ে পরামর্শ চাওয়া হয়নি। কেন হল না সেই প্রশ্নের সদুত্তর মিলছে না।

পঠনপাঠন সংক্রান্ত বিষয়টি সম্পূর্ণ ডিনের তত্ত্বাবধানে থাকার কথা৷ অথচ কলা ও বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন মহেন্দ্রনাথ রায়ের দাবি, তিনি বিষয়টি নিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন। সব জানার পরও তাহলে কেন বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হচ্ছে না, কেনই বা আইনের দ্বারস্থ হচ্ছে না কর্তৃপক্ষ, স্পষ্ট করে তার কোনও উত্তর দেননি মহেন্দ্রনাথ। তাঁর বক্তব্য, ‘আইনজীবীর পরামর্শ অনুয়ায়ী আপাতত আমরা পুলিশকে কিছু জানাচ্ছি না। তবে বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। যাতে একটি কমিটি গঠন করে তদন্তের ব্যবস্থা করা যায় তার চেষ্টা হচ্ছে।’

কীভাবে একজন বাংলাদেশি ছাত্রের বাড়বাড়ন্ত হল তা নিয়েই চর্চা চলছে ক্যাম্পাসে। সূত্রের খবর, মাস কমিউনিকেশন বিভাগের এক শিক্ষকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ শান। সেই শিক্ষকের প্রশ্রয়েই ছাত্রাবস্থা থেকেই বিভাগে ছড়ি ঘোরাতে থাকেন তিনি। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফোটোগ্রাফার হিসেবে যেতেন শান। শানকে সামনে আনার জন্য পরিকল্পনা করে বিভাগের অন্য গেস্ট ফ্যাকাল্টিদেরও সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ভারতে শানের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক অবগত বলেই জানিয়েছেন মাস কমিউনিকেশন বিভাগের একাধিক বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষক। ওই শিক্ষককেও জিজ্ঞাসাবাদের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

বাংলাদেশি ছাত্রকে শিক্ষক বানিয়ে দেওয়ার খবর শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক অর্ধেন্দু মণ্ডলের বক্তব্য, ‘যা শুনছি তা ভয়ংকর। যেসব শিক্ষক এবং আধিকারিক ওই বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা দরকার। বিষয়টি স্পর্শকাতর। সময় নষ্ট না করে কর্তৃপক্ষের উচিত পুলিশ ও প্রশাসনে সবটা জানানো। কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চুপ করে আছে বুঝতে পারছি না।’

শানের প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি মাস কমিউনিকেশনের বিভাগীয় প্রধান বরুণ রায়। তাঁর কথা, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে মিডিয়ার কাছে মুখ খুলতে বারণ করেছে। তাই কিছু বলব না।’ তবে শান ইস্যুতে কর্তৃপক্ষের কড়া পদক্ষেপ চাইছেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশি ছাত্রকে নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *