NBU | কোমা’র পথে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

NBU | কোমা’র পথে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : সাহিত্যিক দেবেশ রায় উত্তরবঙ্গকে বলেছিলেন ‘ভগবানের আঙিনা’। সেই আঙিনায় শিক্ষার সাত রংয়ের ছবি আঁকার নানা প্রতিশ্রুতির কথা বিভিন্ন সময় শোনা গিয়েছে। জেলায় জেলায় তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে প্রতিটি ক্যাম্পাসেই চরমে উঠেছে বিশৃঙ্খলা। ভেঙে পড়েছে শিক্ষার প্রশাসনিক কাঠামো, লাটে উঠেছে পড়াশোনা থেকে গবেষণা সবকিছুই। প্রশাসকহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দশা হয়েছে ঢালতরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দারের মতো। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উপাচার্যহীন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্যের অন্যতম পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এই মুহূর্তে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ামক, কলেজ পরিদর্শক সহ প্রায় একডজন গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা। বন্ধ হয়ে রয়েছে বার্ষিক সমাবর্তন। জোড়াতালি দিয়ে কোনওরকমে কাজ চললেও, শিক্ষা দপ্তরের উদাসীনতায় অন্ধকারে হাজার হাজার পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ।

উপাচার্য থাকাকালীন ২০২২-এর ১৯ সেপ্টেম্বর নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য। তারপর থেকেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ছেলেখেলা চলছে। গত প্রায় তিন বছরে ছ’বার উপাচার্য বদল হয়েছে। রাজভবন ও নবান্নের টানাপোড়েনে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগও আটকে গিয়েছে। কিন্তু বাকি যে পদগুলিতে নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের হাতে সেই পদগুলিও কেন মাসের পর মাস ফাঁকা পড়ে রয়েছে তার সদুত্তর মেলেনি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বক্তব্য, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সচল রাখতে পদক্ষেপ হয়েছে।’

শিক্ষামন্ত্রী দাবি করছেন ঠিকই, তবে বাস্তব পরিস্থিতি অন্য কথা বলছে। দিলীপকুমার সরকার অবসর নেওয়ার পর ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ফাঁকা পড়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী রেজিস্ট্রারের চেয়ার। কখনও শিক্ষক, কখনও কোনও আধিকারিককে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হলেও নির্দেশিকা জারি করে তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে রাজ্য। ফলে দৈনন্দিন নিয়মমাফিক কিছু কাজ ছাড়া অস্থায়ী রেজিস্ট্রার থাকা না থাকা কার্যত সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তরের উচ্চশিক্ষার প্রধান স্তম্ভ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষা দপ্তর এতটাই উদাসীন যে, সাড়ে চার বছর হতে চললেও স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগ করা হয়নি। কেন হল না সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক অর্ধেন্দু মণ্ডল। তাঁর কথা, ‘আমরা বারবার সব মহলে অনুরোধ করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাঁকা পদগুলি দ্রুত পূরণ করার জন্য। কেউ কথা শুনছে না। ফলে আমাদের সবাইকে ভুগতে হচ্ছে।’

২০২১-এর ফেব্রুয়ারি থেকে ফিন্যান্স অফিসারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদটিও ফাঁকা। ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি থেকে খালি পড়ে রয়েছে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসারের চেয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৪৯টি কলেজ। সেই কলেজগুলির দেখভালের দায়িত্ব কলেজ পরিদর্শকের। ২০২৪-এর এপ্রিল থেকে সেই পদে লোক নেই। পরীক্ষা পরিচালনার মূল দায়িত্ব যাঁর কাঁধে সেই পরীক্ষা নিয়ামক অবসর নিয়েছেন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। এখনও ক্যাম্পাস স্থায়ী পরীক্ষা নিয়ামকহীন। কয়েক বছর ধরে নেই এস্টেট অফিসার, নিরাপত্তা আধিকারিকও। শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় দেখভালের মূল দায়িত্ব যাঁদের উপর থাকে সেই কলা ও বিজ্ঞান- দুই বিভাগের ডিনের পদগুলিও খালি পড়ে। এক শিক্ষককে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি চাপ সামলাতে পারছেন না।

অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ উপাচার্য নেই। আর যাঁদের উপর বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁরা আইনের গ্যাঁড়াকলে পড়ার ভয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছেন না। উপাচার্য না থাকায় বছর দুয়েক হল বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠক। ফলে কোনও সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা যাচ্ছে না। শিক্ষকদের অভিযোগ, সবথেকে বেশি ক্ষতি হচ্ছে গবেষণায়। গবেষণায় পিছিয়ে পড়ায় ইতিমধ্যেই ন্যাকের মূল্যায়নে একধাপ নীচে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান। আর প্রশাসনিক অচলাবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ার মতো দশা হয়েছে গবেষণার। পদাধিকারবলে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ রিসার্চ স্টাডিজের চেয়ারম্যান। তিনি না থাকায় একদিকে গবেষণা সংক্রান্ত বহু সিদ্ধান্ত থমকে রয়েছে। অন্যদিকে অর্থ খরচের অনুমোদন না থাকায় বিভিন্ন সরঞ্জামের অভাবে  গবেষণাগারগুলি ধুঁকছে। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশ পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।

২০১৭ সালের আইন অনুসারে জরুরি পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনও সমস্যা মেটাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। সেই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। সেই আইনেই প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসকও নিয়োগ করতে পারে রাজ্য। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সংসদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে একাধিক পদক্ষেপ করতে পারে। তা সত্ত্বেও ধীরে ধীরে কোমার পথে এগিয়ে যাওয়া উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনও হেলদোল নেই শিক্ষা দপ্তরের।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *