শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: শুক্রবার সন্ধেয় পরিবারের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (NBSTC) পুজো পরিক্রমার বাসে উঠছিলেন বিমল শর্মা। অসুস্থতার কারণে ধীরে ধীরে বাসে ওঠেন। এরপর নিগমের এক কর্মী এসে হাতে তুলে দিলেন একটি প্যাকেট। প্যাকেট খুলে পেলেন একটি প্যাটিস। সেই প্যাটিসে কামড় বসাতে না বসাতেই বাস ছাড়ে। গন্তব্য তখন জাতীয় শক্তি সংঘ ও পাঠাগার। স্বামীর সঙ্গে পাশাপাশি সিটে বসে জানলা দিয়ে আলোয় সেজে ওঠা শহর শিলিগুড়ি চাক্ষুষ করছিলেন বছর ছেষট্টির প্রবীণ বিন্দু দাস। উৎসাহের সুরে বিন্দু বলেন, ‘বাসে পুজো পরিক্রমার সুবিধা থাকায় তবু একটু ঘুরতে পারছি। না হলে আমাদের মতো বয়স্ক মানুষ কীভাবে আর ঘুরবে!’
বৃহস্পতিবার চতুর্থীতে পুজো পরিক্রমার আয়োজন ছিল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের উদ্যোগে। পরিক্রমার বুকিং করা যাত্রীদের জন্য ছিল ঢালাও আয়োজন। স্ন্যাক্স থেকে ডিনার, সবকিছুই ছিল নির্দিষ্ট মূল্যের মধ্যে। তবে পুজোর অন্যদিনে পর্যাপ্ত বুকিং থাকলেও চতুর্থীতে কিছু আসন খালি ছিল। এদিন নন-এসি বাসে ৩২ সিটের মধ্যে ১৯ সিটে বুকিং হয়। অন্যদিকে, এসি বাসের ২৭ সিটের মধ্যে ১৮ সিট বুক করেন দর্শনার্থীরা। পঞ্চমীতেও রয়েছে পুজো পরিক্রমার ব্যবস্থা। দুটি বাসে সমস্ত সিট বুক থাকবে বলে আশা করছেন নিগম কর্তারা। নিগমের শিলিগুড়ি ডিভিশনের ডিভিশনাল ম্যানেজার পদে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সৌভিক দে বলছিলেন, ‘আসলে এবার আমরা কুড়ি তারিখ থেকে টিকিট বুক শুরু করেছিলাম। বুকিংয়ের জন্য বেশি সময় দিতে পারিনি। তাছাড়া প্রতিবার একটা বাসে পরিক্রমা করা হয়। এবার পুজো পরিক্রমার জন্য একটি নন-এসি ও একটি এসি বাসের ব্যবস্থা রয়েছে।’
এদিন বাস ছাড়ার পর প্রথমে যায় উত্তর মাল্লাগুড়ি সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির মণ্ডপে। সেখান থেকে বাস যায় উত্তরায়ণের পুজোয়। এরপর মেডিকেল হয়ে বাস ঢোকে শহরের বিগ বাজেটের পুজোগুলোয়।
নাতিকে নিয়ে এদিন বাসে পুজো পরিক্রমায় বেরিয়েছিলেন মানসী রায়। বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধা আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘পায়ের ব্যথায় এখন আর বেশি ঘুরতে পারি না। তবুও নাতির সঙ্গে বেরোলাম। বছরকার দিনে কোথায় কোন মণ্ডপ হয়েছে- একটু তো দেখতে ইচ্ছে করে।’
এবার প্রথম উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের তরফে সুব্রত সংঘের সঙ্গে বিশেষ গাঁটছড়া বাঁধা হয়েছিল। বাস পৌঁছাতেই বিশেষভাবে অভ্যর্থনা জানান ক্লাবের সদস্যরা। এক ঘণ্টার জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পুজো দেখিয়ে রাতে টার্মিনাসে বাস ঢুকতেই প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় ডিনারের প্যাকেট। পঞ্চমীতে দুটো বাসেই ফুল সিট বুকিংয়ের আশায় নিগমের কর্মীরা।