রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: ‘আসি যাই, মাইনে পাই’ করে প্রচুর চিকিৎসক নিয়মিত বেতন তুলছেন। কিছু চিকিত্সক আবার মাসের পর মাস আসেনই না। স্বাস্থ্য ভবন বা কলকাতার কোনও মেডিকেল কলেজে গিয়ে বায়োমেট্রিক উপস্থিতি দিয়ে দেন। নিয়মিত অবশ্য বেতন পাচ্ছিলেন তাঁরা। এবার এমন ১৬ জন চিকিৎসকের (Medical doctors) বেতন আটকে দিল উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (NBMCH)। এই চিকিৎসকদের জানুয়ারি মাসের বেতন দেওয়া হয়নি।
মেডিকেল সূত্রে খবর, একাধিকবার নোটিশ করেও জবাব মেলেনি। নোটিশ পাওয়ার পরও নিয়মিত কাজে আসছেন না ওই অধ্যাপক চিকিৎসকরা। তাই জানুয়ারি মাস থেকেই তাঁদের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রজিৎ সাহা। তাঁর বক্তব্য, ‘পুরো বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে সিনিয়ার ডাক্তারদের একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন ফাঁকিবাজি করছেন বলে অভিযোগ। সরকারি নিয়মে রবিবার বাদে সপ্তাহের বাকি ছ’দিনই অধ্যাপক চিকিৎসকদের কর্মস্থলে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কলকাতা থেকে এখানে কর্মরত চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ অনিয়মিত। কিছু চিকিৎসক মাসে একবার এসে দু’দিন থেকে চলে যান। কিছু চিকিৎসক পালা করে নিজেদের মধ্যে দুটি টিম তৈরি করে সপ্তাহে দু’দিন করে থাকছেন। একদল সোমবার এসে বুধবার চলে যান। অপর দলটি বুধবার এসে শুক্রবার চলে যান। বাকি সময় তাঁরা কলকাতায় প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। ফলে মেডিকেলের চিকিত্সা ব্যবস্থা অনেকটাই ডাক্তারি পড়ুয়া নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। আরজি কর কাণ্ডের পর এখানকার বেশ কিছু চিকিৎসক কাজে ফাঁকি দিয়ে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে আন্দোলনের নামে মিটিং, মিছিল করছেন। অভিযোগ, তাঁদের কেউই নিয়ম মেনে ছুটি নেন না। আর এখানে ডাক্তারি পড়ুয়াদের পঠনপাঠন হচ্ছে না, হাসপাতালে রোগী চিকিৎসাও ভেঙে পড়ছে। যার দায় স্বাস্থ্য দপ্তরকে নিতে হচ্ছে।
বর্তমানে অধ্যাপক চিকিৎসকদের বায়োমেট্রিক মেশিনে উপস্থিতি দিতে হয়। পাশাপাশি অধ্যক্ষের অফিসের রেজিস্ট্রারেও সই করতে হয়। পে স্লিপ তৈরির আগে দুটি জায়গার উপস্থিতির সংখ্যা মিলিয়ে দেখে তবেই বেতন দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু বেশিরভাগ অধ্যাপক চিকিৎসক সেসবের তোয়াক্কা করেন না বলে অভিযোগ।
অর্থোপেডিক, সার্জারি, নেফ্রোলজি, প্রসূতি, চক্ষু বিভাগের সিনিয়ার ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। এমনই ১৬ জন চিকিত্সক কয়েক মাস ধরে অনিয়মিত যাতায়াত করছেন। মেডিকেল সূত্রের খবর, অভিযুক্ত প্রত্যেক চিকিৎসককে একাধিকবার নোটিশ পাঠিয়ে নিয়মিত কর্মস্থলে আসার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কেউই সদুত্তর দেননি। এরপরেও কেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সেটা শেষবার নোটিশ দিয়ে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তার পরও জবাব না আসায় বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মেডিকেলের সিনিয়ার চিকিৎসকদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, এক একজন অধ্যাপক চিকিৎসক দেড় লক্ষ থেকে আড়াই-তিন লক্ষ টাকা বেতন পান। তারপরও তাঁরা কেন নিয়মিত কর্মস্থলে আসবেন না? শুধু এই ১৬ জনই নয়, আরও এমন প্রচুর অধ্যাপক চিকিৎসক নিয়মিত আসছেন না। প্রতিটি বিভাগে কঠোরভাবে নজরদারি চালিয়ে বাকি ফাঁকিবাজ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও বেতন বন্ধ করে দেওয়ার দাবি উঠেছে।