রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি : উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে টাকা না দিলে কোনও কাজ দ্রুত হাসিল হচ্ছে না। তা সে রক্ত পেতেই হোক বা যে কোনও অপারেশন, এমনকি শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা। এই অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বহুদিন ধরেই মেডিকেলে দালালচক্রের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। জায়গায় জায়গায় ‘দালাল হইতে সাবধান’ বাণী লেখাও রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দালালদের দৌরাত্ম্য দিন-দিন বাড়ছে বই কমছে না। কারণ চিকিৎসক, নিরাপত্তারক্ষী সহ চিকিৎসাকর্মীদের একটা বড় অংশই দালালচক্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার ফের মেডিকেলে টাকা নিয়ে শারীরিক পরীক্ষার দিন এগিয়ে নিয়ে আসার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। যা নিয়ে হাসপাতালের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও হাসপাতাল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি মানুষকেও তিনি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
মেডিকেলে আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান, বায়োপ্সি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য সাধারণ রোগীদের দেড়, দু’মাস বা তারও পরে সময় দেওয়া হয়। আর টাকা ফেললে সেই কাজই দু’তিনদিন, খুব বেশি হলে এক সপ্তাহে হাসিল হয়ে যায় বলে অভিযোগ। ফলে গরিব মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতাল ভেবে মেডিকেলে এলেও তাঁদের গাঁটের কড়ি খরচ না করলে চিকিৎসা পরিষেবা মেলে না। অপারেশনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা মেডিকেলে। এখানে যে কোনও অপারেশনের জন্যও রোগীদের মাসের পর মাস ঘোরানো হয়। আবার অনেক সময় অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে নিয়ে গিয়েও অপারেশন না করিয়েই ওয়ার্ডে ফেরত পাঠানো হয়। আবার দালাল ধরলে নিমেষেই সমস্ত কাজ হয়ে যায়।
এমনই ঘটনা মঙ্গলবার সুপার আল্ট্রাসনোগ্রাফি বিভাগে দেখা গিয়েছে। কয়েকদিন আগেই পুরোনো জায়গা থেকে সুপারস্পেশালিটি ব্লকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বিভাগ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে এদিন গিয়ে দেখা গেল, এদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসক যে রোগীদের আল্ট্রাসনোগ্রাফি লিখেছেন তাঁরা সেই পরীক্ষার জন্য সময় নিতে সুপারস্পেশালিটি ব্লকে লাইন দিয়েছেন। কাউকে অগাস্টের ২৭-২৮ তারিখ, কাউকে সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আসার জন্য সময় দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের অনেকেই বলছেন, এখন শারীরিক সমস্যা হচ্ছে বলেই ডাক্তার দেখাতে এসেছি। ডাক্তার দ্রুত আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে বলেছেন। অথচ এখান থেকে দেড় মাস পরে পরীক্ষার জন্য সময় দেওয়া হচ্ছে।
এখান থেকে সিঁড়ি দিয়ে তিনতলায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি বিভাগে যেতেই আশিস সিংহ নামে এক তরুণ বললেন, ‘আমাকে সেপ্টেম্বর মাসের ৬ তারিখে আল্ট্রাসনোগ্রাফির জন্য সময় দিয়েছিল। তারপর একজন নিরাপত্তারক্ষীকে গিয়ে বললাম। উনি ৩০০ টাকা নিয়ে আমাকে আজই করিয়ে দিলেন।’ আল্ট্রাসনোগ্রাফির লাইনে দাঁড়িয়ে চটেরহাটের আসিরুন খাতুন বললেন, ‘১৭ জুন ডাক্তার দেখিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফির জন্য ২৯ জুলাই সময় দিয়েছিল। সেই মতো এদিন সকালে এসে লাইন দিয়েছি। কিন্তু পিছন থেকে এখানকার কর্মীরা লোক এনে লাইন ঠেলে ভিতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমরা সকাল থেকে দাঁড়িয়েই রয়েছি।’ রোগীরা জানিয়েছেন, সুপারস্পেশালিটি ব্লকেও দালালে ভরে গিয়েছে। এখানকার কিছু নিরাপত্তাকর্মী সহ অন্যান্য কর্মী বাইরের লোকদের সঙ্গে মিলে দালালচক্র চালাচ্ছে। হাসপাতালের ভিড়ে মিশে কে যে কোথায় দালালচক্রের হয়ে কাজ করছে, টাকা তুলছে সেটা সহজে বোঝা মুশকিল।