নাগরাকাটাঃ বাড়ি থেকে এক শিশুকে মুখে করে চা বাগানের ঝোঁপে তুলে নিয়ে গেল একটি চিতাবাঘ। শিশুটির প্রাণ রক্ষায় হাতের কাছে থাকা একটি চেয়ার ছুঁড়ে মারলেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। যদিও শেষ রক্ষা হল না। যখন শিশুটির বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে ১৬ নম্বর সেকশন থেকে খুবলে খাওয়া দেহ উদ্ধার হল তখন তাতে আর প্রাণ নেই। শুক্রবার রাতে হাড়হিম করা ঘটনাটি ঘটেছে নাগরাকাটার আংরাভাসা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কলাবাড়ি চা বাগানে। বছর তিনেক এর শিশুটির নাম আয়ুশ কালান্দি। এরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা বাগান। ঘটনাস্থলে গিয়ে বনদপ্তর ও পুলিশ বাগানের ঝোপ থেকে শিশুটির দেহ উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয়রা প্রবল আক্রোশে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়ে্ছে, এদিন রাতে খাওয়া দাওয়ার পর শিশুটি তাঁর দাদুর সাথে বাগানের হুলাশ লাইনের বাড়ির দাওয়ায় বসে ছিল। সেসময় একটি চিতাবাঘ অতর্কিতে ঢুকে পড়ে আয়ুশকে মুখে করে টেনে নিয়ে যায়। পরিবারের লোকজন চিৎকার শুরু করলে জাকশার খেরোয়ার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা রাস্তা টপকে আয়ুশকে চিতাবাঘ নিয়ে যাচ্ছে এমন দৃশ্য দেখতে পেয়ে দ্রুত বাড়ির ভেতর থেকে চেয়ার এনে ছুঁড়ে মারেন। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ঘনঘন মুর্ছা যাচ্ছেন মা পুনিতা। আয়ুশের বাবা নেই। কোনওরকমে বাগানে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান ওই মহিলা।
ঘটনার পরই বন দপ্তরের ডায়না ও বিন্নাগুড়ি রেঞ্জের কর্মীরা সেখানে চলে যান। আসে বানারহাট থানার পুলিশও। স্থানীয়রা তাঁদের ঘিরে ধরে তুমুল ক্ষোভ দেখাতে থাকে। বহু কষ্টে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বেশী রাতে তাঁরা দেহ উদ্ধারে সফল হন। কলাবাড়ির শ্রমিকরা জানাচ্ছেন এই বাগানে দীর্ঘদিন ধরে চিতাবাঘের একের পর এক হামলা চলছে। তবুও বন দপ্তরের পক্ষ থেকে সদর্থক কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি। এর আগে বন দপ্তরের পেতে রাখা খাঁচায় সেখানে পরপর ৩ টি চিতাবাঘ ধরাও পড়ে। বাগানের পিন্টু বরাইক নামে এক শ্রমিক বলেন, এখানে প্রাণের কোন মূল্য নেই। শিশুর এমন মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি সীমা চৌধুরি বলেন, অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। এই শোকের কোন ভাষা নেই। পরিবারটির পাশে প্রশাসন ও বন দপ্তর সবরকম ভাবে থাকবে।
এর আগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর নাগরাকাটার খেরকাটা গ্রামেও একইভাবে বাড়ির উঠোন থেকে সুশীলা গোয়ালা নামে চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে চিতাবাঘ তুলে নিয়ে যায়। পরে খেরকাটার জঙ্গল থেকে তার খোবলানো দেহ উদ্ধার হয়। তার আগে গত বছরেরই জুলাই আগে বানারহাটের তোতাপাড়া চা বাগানে এক শিশুর এভাবেই মৃত্যু হয়।