শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা : সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নাগরাকাটা ব্লকের চারটি হাইস্কুলে মোট ২৪ জন শিক্ষক ও ৫ জন শিক্ষাকর্মী চাকরি খুইয়েছেন। তাঁরা কেউই আর স্কুলে আসছেন না। ফলে স্কুলগুলি চালাতে এখন প্রধান শিক্ষক ও টিআইসিরা রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছেন। এমনকি সমস্যার সমাধান না হলে মাধ্যমিকের ফল বের হওয়ার পর স্কুলগুলিতে একাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন আদৌ চালু রাখা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
ব্লকের মধ্যে নাগরাকাটা হিন্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে। সেখানে নবম-দশম শ্রেণির ১১ জন শিক্ষক চাকরি হারান। বর্তমানে হিন্দি ও ইংরেজি ছাড়া মাধ্যমিক স্তরে অন্য কোনও বিষয় পড়ানোর লোক নেই। এবিষয়ে স্কুলের টিআইসি মনোহর সুরি বলেন, ‘আমাদের স্কুলে প্রায় আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। এখন এই বিপর্যয় কীভাবে সামাল দেব তা ভেবে কোনও কূলকিনারা পাচ্ছি না।’
অন্যদিকে, লালবাহাদুর শাস্ত্রী স্মারক বাংলা-হিন্দি হাইস্কুলেরও একই অবস্থা। সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। ওই স্কুলে মোট ছয়জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চারজন নবম-দশম শ্রেণিতে পড়াতেন। বাকি দুজন উচ্চমাধ্যমিক স্তরেরও পড়াতেন। স্কুলের টিআইসি টিকারাম ছেত্রীর কথায়, ‘দুই ভাষার মাধ্যম মিলিয়ে স্কুলে বর্তমানে মোট সাতজন শিক্ষক রয়েছেন। একসঙ্গে ১৪টি করে ক্লাস চলে। তাই বর্তমানে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি করে পিরিয়ডে ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না।’
অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার সবচেয়ে পুরোনো হিন্দিমাধ্যমের চ্যাংমারি টিই হাইস্কুলে চাকরিহারার তালিকায় তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। স্কুলের ভূগোল, ইতিহাস ও ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক কুমার ছেত্রী বলেন, ‘এই স্কুলে ১৭০০ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। প্রত্যেকেই চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের সন্তান। আমি আশা করছি সরকার স্কুলগুলিকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করবে।’ নাগরাকাটা হাইস্কুলে একজন চাকরি হারিয়েছেন। অন্যদিকে, সুলকাপাড়া হাইস্কুলে তিনজনের চাকরি নেই। তাঁরা ইতিহাস, অঙ্ক ও জীবনবিজ্ঞান পড়াতেন। পাশাপাশি দুই শিক্ষাকর্মীরও চাকরি বাতিল হয়েছে। ওই স্কুলের টিআইসি সুদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, ‘ভবিষ্যতে কী হবে তা ভেবেও আমরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি।’