পরাগ মজুমদার, বহরমপুর: রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় অচেনা মুখের সংখ্যা বাড়ছে। মালদা থেকে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি থেকে মুর্শিদাবাদ, সর্বত্রই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের খোঁজ মিলছে। তাদের হাতে আধার কার্ডও পৌঁছে যাচ্ছে। জাল আধার কার্ড তৈরির চক্রের হদিস ইতিমধ্যে মিলেছে বিভিন্ন জায়গায়। এবার ভুয়ো শংসাপত্র তৈরির চক্রেরও খোঁজ পাওয়া গেল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এমন চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সিপিএমের (CPM) এক মহিলা জনপ্রতিনিধি ও তাঁর স্বামী। বাজেয়াপ্ত হয়েছে কম্পিউটার সহ বেশ কয়েকটি ডিভাইস। পুলিশ এমন কারবারের একটি কেন্দ্রস্থলের সন্ধান পেয়েছে। ঘটনায় শোরগোল পড়েছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) লালবাগ মহকুমার লালগোলা (Lalgola) এলাকায়। বিধানসভা নির্বাচনের মুখে এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে সিপিএম। যদিও দলের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লার সাফাই, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। সবটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’
কিন্তু কী করে এমন চক্রের হদিস মিলল? জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে নাতনিকে নিয়ে এক মহিলা বিডিও অফিসে এসেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, জন্ম শংসাপত্র থাকার পরেও নাতনির আধার কার্ড করে দেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ পৌঁছায় জয়েন্ট বিডিও মহম্মদ আবু তৈয়ব মণ্ডলের কাছে। তিনি ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলে জন্ম শংসাপত্রটি নেন। যাতে চোখ রেখেই তাঁর সন্দেহ হয়। যথারীতি নানান দিক খতিয়ে দেখার পর তিনি বুঝতে পারেন জন্ম শংসাপত্রটি ভুয়ো। জয়েন্ট বিডিও বলছেন, ‘শংসাপত্রটি যে সঠিক, তার ন্যূনতম প্রমাণ পাইনি। তারপরেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে জানাই।’
অভিযোগ পেয়েই পুলিশ তদন্তে নামে। জানতে পারে কারবারের সঙ্গে যুক্ত বাহাদুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সিপিএমের নুরজেমা বিবি ও তাঁর স্বামী সামিরুল শেখ। দুজনকেই সোমবার রাতে লালগোলার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ জানতে পেরেছে, সরকারি জমি দখল করে একটি আউটলেট খুলেছিল সামিরুল। সেখানে অনলাইন সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ হত। আড়ালে চলত জাল শংসাপত্র তৈরি। এই কাজে তাঁর সহযোগী ছিলেন পঞ্চায়েত সদস্য স্ত্রী। তাঁদের জেরা করার পর কেন্দ্রটিতে অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার সহ একাধিক ডিভাইস বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। এই কাজের সঙ্গে আর কে কে যুক্ত, তার খোঁজ পেতে ধৃত দুজনকে ম্যারাথন জেরা করছে পুলিশ।
কিছুদিন আগে জেলায় এক স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে জাল আধার কেন্দ্রের খোঁজ পেয়েছিল পুলিশ। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের হাতে এই কেন্দ্র থেকে আধার কার্ড পৌঁছে যেত বলেও পুলিশের অনুমান। এবার সামনে এসেছে জাল জন্ম শংসাপত্র তৈরির হদিস। শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিরা এমন বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায়, তা আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।