দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: ভিনরাজ্যে অসহায় অবস্থায় বাংলার শ্রমিকরা। হরিয়ানা থেকে পঞ্জাব, বাংলায় কথা বললেই নাকি তুলে নিচ্ছে পুলিশ, রাখা হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পেও। বাংলাদেশি তকমা দিয়ে পুশব্যাক করার ঘটনাও ঘটেছে। নিস্তার নাকি মিলছে সঙ্গে ২০০২ সালের সংশোধিত ভোটার তালিকা থাকলে। ওই তালিকা এখন চাইছেন বিভিন্ন রাজ্যে থাকা বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা। সঙ্গে রাখতে চাইছেন বার্থ সার্টিফিকেটও। এমন পরিস্থিতিতে দিল্লি, হরিয়ানা সহ বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করা শ্রমিকদের সাহায্য করতে উদ্যোগী হয়েছে কংগ্রেস। রায়গঞ্জ ব্লক কংগ্রেস মাইনরিটি সেল সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভিনরাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের পরিবারের হাতে ২০০২ সালের সংশোধিত ভোটার তালিকা তুলে দেওয়ার। জন্ম শংসাপত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রেও সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছে সংগঠনটি।
মাইনরিটি সেলের সভাপতি মনসুর আলি বলেন, ‘দিল্লি, ওডিশা, গুজরাট সহ বিভিন্ন রাজ্যে আমাদের এখানকার কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। এখানে কাজ না থাকায় তাঁদের ভিনরাজ্যে চলে যেতে হয়েছে। প্রতিদিন পরিযায়ী শ্রমিকরা ফোন করছেন ২০০২ সালের সংশোধিত ভোটার তালিকা পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। সংগঠনের তরফে বাড়ি বাড়ি তা পৌঁছে দেওয়া হবে।’
মালদা, মুর্শিদাবাদের মতো উত্তর দিনাজপুর জেলারও কয়েক হাজার বাসিন্দা ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল, ভাটোল, মহীপুর, শীতগ্রাম, গৌরী, বাহিন মিলিয়ে প্রায় ছয়-সাত হাজার পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে নির্মাণশিল্পের পাশাপাশি প্লাইউড, প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করেন। সেখানে যাতে তাঁদের সমস্যায় পড়তে না হয়, তার জন্য এগিয়ে এসেছে কংগ্রেসের মাইনরিটি সেল।
রবিবার সংগঠনটির তরফে বুথ কমিটির সদস্যদের হাতে ২০০২ সালের সংশোধিত ভোটার তালিকা তুলে দেওয়া হয়। বুথ কমিটির সদস্যরা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছে দেবেন ওই তালিকা। বিন্দোলের বাসিন্দা আবু তাহের প্রায় ১৫ বছর ধরে দিল্লিতে কর্মরত। টেলিফোনে তিনি বলছেন, ‘বিন্দোলে কাজ নেই। তাই বাধ্য হয়ে ১৫ বছর ধরে দিল্লিতে আছি। আমাদের কাছে ২০০২ সালের সংশোধিত ভোটার তালিকা, বার্থ সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড ছাড়া কিছুই নেই। তাই প্রধান সহ অন্যদের কাছে তথ্যগুলি পাঠানোর জন্য আবেদন করেছি।’
বিন্দোলের কংগ্রেস নেতা মহম্মদ আলম বলেন, ‘ইতিমধ্যে ১৫ জনের বার্থ সার্টিফিকেট এবং ভোটার তালিকা রেডি করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যতটা সম্ভব আমরা সাহায্য করব।’ অনেক বছর ধরে ভিনরাজ্যে কাজ করায় অনেকে ঠিকঠাক তথ্য দিতে পারছেন না। তাই বার্থ সার্টিফিকেট বের করতে ভীষণ সমস্যা হচ্ছে বলে জানান গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জিন্নাতুর খাতুন। তবে প্রয়োজনীয় তথ্য পরিবারগুলির হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান। কাজ না থাকায় শ্রমিকরা গ্রামে ফিরলে চরম সমস্যা দেখা দেবে বলেও মনে করছেন অনেকে।